ঝড়-বৃষ্টিতে বরিশালে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১২ই মে ২০২২ ০৭:১৯ অপরাহ্ন
ঝড়-বৃষ্টিতে বরিশালে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি

চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় ঝড়-বৃষ্টিতে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলা বৃষ্টিতে ঝরে গেছে অসংখ্য জমির ধান। ঝড়ের তীব্র বাতাসে কয়েক শত বিঘা জমিতে ধান হেলে পরেছে। পাকা ধান ডুবে গেছে বৃষ্টির পানিতে। 


কিন্তু ধান কাটার সময়ের ঠিক আগে ঈদের রাত থেকে কয়েক দফায় ঝড়ে জমিতে হেলে পড়েছে ধান। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ জমির ধানই ডুবে আছে পানিতে। পানিতে নেমে অনেকেই ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে মেঘলা আকাশের কারণে ধান শুকাতে পারছেন না তারা।


খেতের বোরো ধান পরে যাওয়ায় ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও ধান ঘরে তুলতে গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। আর দিনমজুর শ্রমিক মিলছে ৮০০-৯০০ টাকায়। এখন এক মণ ধান বিক্রির টাকায়ও মিলছে না একজন শ্রমিক। তীব্র শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পরেছে এই উপজেলার বোরো চাষিরা।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়। জমি চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ধান।

তবে বৈশাখের শুরু থেকেই কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষকের আবাদ মাটিতে নুয়ে পরেছে। মাঠে প্রায় সবজাতের ধান পেকে গেছে। অনেক কৃষকই ধানকাটা শুরু করেছে। কিন্তু তীব্র শ্রমিক সংকটে এই উপজেলার চাষিরা পুরোদমে বোরো ধান কাটতে পারছেন না।


সরেজমিনে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছর এই সময়ে খেতের প্রায় অর্ধেক ধান কৃষকের বাড়িতে আসে। কিন্তু চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় শ্রমিক সংকটে বোরো ধান কাটার কাজ অনেকেই শুরু করতে পারেনি। এদিকে কয়েক দফা ঝড়-বৃষ্টিতে খেতের ধান জমিতে নুয়ে পরে পচে যাচ্ছে। 


কৃষকরা জানান, প্রতি বছর গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, শরণখোলা, মোড়লগঞ্জ, পিরোজপুর জেলা-উপজেলার ধান কাটা শ্রমিকেরা আসতো। কিন্তু এ বছর চাহিদার তুলনায় মাত্র কয়েকটি জেলা থেকে শ্রমিক এসেছে। এজন্য ধান কাটার শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। এদিকে মাঠে ফসল পরে থাকায় ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছে কৃষকরা।


স্থানীয় রিয়াজ সরদার, জাহিদুল গোমস্তা, ছাব্বির হোসেনসহ একাধিক শ্রমিক জানান, এবছর ধানকাটার মজুরি অনেক বেশি। বাহির জেলার শ্রমিক এ বছর কম আসায় এই সমস্যা হয়েছে। এছাড়াও মাটিতে নুয়ে পড়া ধান কাটতে শ্রম ও সময় বেশি লাগে। বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা হাজিরা হিসেবে ৮শ থেকে এক হাজার টাকা মজুরী নিয়ে থাকি। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।


মাঝারি ও ভাড়ি বৃষ্টি এবং শ্রমিক সংকটে পাকা ধান কাটতে না পারা ও রোদের অভাবে কাটা ধান শুকাতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তা আর উৎকন্ঠায় দিন যাপন করছেন কৃষকেরা।

ধানের স্থানীয় বাজার মূল্যও আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় চাষিদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।


কৃষকেরা জানান, এবছরে শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকা, পর্যাপ্ত পানি, সার, ঔষধ ঠিক সময়ে পাওয়ায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।


শ্রমিক স্বল্পতার মধ্যে কিছু পাকা ধান কাটা হলেও বৃষ্টির কারনে ধানের খর-কুটা পচে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দেবে বলেও জানান চাষিরা।


উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল জানান, উপজেলার ৪৫ ভাগ ধান কাটা হলেও বাকী ৫৫ ভাগ পাকা ধান কাটা নিয়ে চাষীদের বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের তালিকা প্রনয়নের কাজ চলমান রয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ চাষির তালিকা প্রনয়ন ও চূড়ান্ত ক্ষয় ক্ষতির তালিকা করতে পারবেন তারা।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধান বেশি অর্জিত হয়েছে। তবে এবছর ধানের দাম কম। বার বার বৃষ্টি ও ঝড়ের কারনে খেতে ধান শুকানো যায়নি। তবে ধান ভালো ভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা গেলে পরে বিক্রি করে ভালো দাম পেতে পারেন কৃষকরা।