প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১:০
মেহেরপুরে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ শুরু করেছেন। নির্বাচনে বর্তমান এমপি ফরহাদ হোসেন, সাবেক এমপি প্রফেসর আবদুল মান্নান, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়ারুল ইসলাম জনসংযোগে আছেন।
১৯৯১ সালে প্রফেসর আবদুল মান্নান অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে মেহেরপুর-১ আসনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে উপনির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ সালে দলীয় মনোনয়ন পাবার পরও বিএনপির প্রার্থী মাসুদ অরুনের কাছে পরাজিত হন।
ঢাকায় শিক্ষকতা ছেড়ে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে মেহেরপুরে এমপি নির্বাচিত হন ফরহাদ হোসেন দোদুল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার চট্টগ্রামের মাহফুজ হান্নান মেহেরপুর-১ আসনে নির্বাচন করবেন বলে তার নাম মুখে মুখে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মেহেরপুরের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তারই পুত্র সৈয়দ মাহফুজ হান্নান এবার মেহেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। একথা এখন মানুষের মুখে মুখে।
বহুভাগে বিভক্ত মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রান্তিক পর্যায়ের নেতা কর্মিরাও মৃতসঞ্জিবনি হিসেবে মাহফুজ হান্নানকে আশা করছেন। মাহফুজ এমএ হান্নান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিার সংস্থা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের পরিচালক এবং সম্মিলিত মানবাধিকার বিশ্ব হিউম্যান ওয়াল্ডের পরিচালক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত।
তিনভাগে বিভক্ত মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা সভাপতি ফরহাদ হোসেন। তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক রয়েছেন। দ্বিতীয় পক্ষে নেতৃত্বে আছেন দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী। আর তৃতীয় গ্রুপের নেতৃত্বে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী গোলাম রসুলের হাতে।
দলীয় দ্বন্দের প্রশ্নে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়াজান আলী বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর পর দলীয় কাউন্সিলের পর দলীয় মিছিল-মিটিং বন্ধ। সবকিছু হয় মেহেরপুর-১ আসনের এমপির ইচ্ছামতো, পদ বণ্টন হয় এমপির স্বজনদের মধ্যে। তিনি বলেন, সময়মতো এর জবাব দেওয়া হবে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, তার সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বাস্তুহারা লীগসহ দলের একাধিক অঙ্গসংগঠন রয়েছে। মেহেরপুর-১ আসনের এমপি নেতাকর্মিদের ডাকেন না। নেতারাও তার কাছে যান না। কাউন্সিলের পর নেতাদের নিয়ে বসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান- আমাদের এমপি ফরহাদ হোসেন ঢাকায় শিক্ষকতা থেকে এমপি হয়েছেন। এখন ত্যাগী নেতাদের টপকে হয়েছেন দলের সভাপতি। ফলে ত্যাগী নেতাকর্মিরা তার কাছে মূল্যহীন।
মেহেরপু পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে অথচ মেহেরপুর পৌরসভার দূর্ভাগ্য যে পৌরসভার উন্নয়নে ক্ষমতাসীন দলের একটি পক্ষথেকে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর আগে সাবেক পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লার সাথে ওই সময়ের আওয়ামী লীগের এমপি জয়নাল আবেদিনের সাথে বিরোধে পৌর উন্নয়ন স্থবির ছিলো। ২০১৭ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বচিত হয়েছি, অথচ একটি ক্ষমতার কালোছাঁয়া পৌরসভার উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কোন সরকারি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র হিসেবে আমাকে আমন্ত্রিত করা হলে সেই অনুষ্ঠানে হাজির হন না এমপি। তিনি যেসব অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন সেসব অনুষ্ঠানের ব্যানার থেকে আমার নাম বাদ দিয়ে নতুন করে ব্যানার করতে হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন।
২৫ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুরের সাবেক এমপি প্রফেসর আবদুল মান্নান মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বর্তমান এমপি’র এমন কর্মকান্ড আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। আমি এতদিন ঢাকায় ছিলাম- এখন থেকে মেহেরপুরে নিয়মিত হবো। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে তিনি জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ২০০৮ সালে নির্বাচিত এমপি জয়নাল আবেদিন দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গে বলেছেন- মেহেরপুরে দলীয় কোন্দল দলের জন্ম থেকেই। এই দ্বন্দ নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ও ক্ষমতা ধরে রাখার।
মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খ.ম. ইমতিয়াজ বিন হারুণ জুয়েল বলেছেন, ৮ বছর পর গত ১৬ মে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। শুনেছি কেন্দ্রে একটি কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দলে কোন্দল মেটেনি বরং আওয়ামী লীগ তিনভাগে বিভক্ত হয়ে নেতাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। দলের এই কোন্দলে জেলা কার্যালয়টিও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
জেলার তৃণমূল পর্যায়ের কর্মিরা জানান- দলীয় কোন্দলে তারাও গ্রাম পর্যায়ে বিভক্ত হয়ে আছেন। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার পরও দলের স্থায়ী নিজস্ব কার্যালয় না হওয়াতে গ্রামের নেতা কর্মিরা হাতাশা প্রকাশ করেন।