হিলিতে লোকসনের আশঙ্কায় পোল্ট্রি খামারিরা, বন্ধ শেড

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: বুধবার ৩০শে নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৩ অপরাহ্ন
হিলিতে লোকসনের আশঙ্কায় পোল্ট্রি খামারিরা, বন্ধ শেড

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা হাকিমপুর হিলির খামারিরা মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন। একদিকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে মুরগির দাম কমে যাওয়ায় এই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের বলে জানান তারা। 


অনেক খামারি লোকসানের আশঙ্কায় শেডে মুরগির বাচ্চা তোলা বন্ধ রেখেছেন। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস পোল্ট্রি খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। 


বুধবার (৩০ নভেম্বর) হিলির পোল্ট্রি খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 


পৌর শহরের ধরন্দা গ্রামের খামারি রোকছানা বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর ৫ বছর আগে আমি নিজ বাড়িতে একটি মুরগির শেড তৈরি করি। ওই শেডে ১৫০০ থেকে ১৭০০ মুরগির বাচ্চা লালন-পালন করা যায়। প্রথমদিকে লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে মুরগির বাচ্চাসহ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর তেমন লাভ হচ্ছে না। তারপরও ধরে রেখেছি ব্যবসা।


রোকছানা বেগম এর শেডে গিয়ে দেখা যায়, ১৭০০ সোনালি জাতের মুরগির বাচ্চা তুলেছেন তিনি। প্রতিটি বাচ্চা কিনেছেন ২৬ টাকা করে। ৬৫ থেকে ৭০ দিন পর ৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজন হলে বিক্রি করবেন তিনি। প্রতিদিন একবস্তা ( ৫০ কেজি) করে ফিড (মুরগীর খাদ্য) খাওয়াতে হয়। একবস্তা ফিডের বর্তমান মূল্য ৩২০০ টাকা। সেই হিসাবে শুধু ২ লাখ ২৪ হাজার টাকার খাদ্যই খাওয়াতে হয় মুরগির বাচ্চাগুলোকে। এর সঙ্গে রয়েছে ওষুধ, বিদ্যুৎ বিল, শেডে বিছিয়ে দেওয়ার জন্য ধানের তুষ। প্রতিবস্তা তুষের দাম ৫০০ টাকা করে। এক চালান মুরগি তুলতে ১০ বস্তার মতো তুষের প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। 


এদিকে, পাইকাররা প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। প্রতি চালানে মুরগি উঠে ১৭০০ থেকে ১৮০০ কেজির মতো। যার বিক্রয় মূল্য ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এতে করে কোনোমতে খরচ তোলা সম্ভব হয়। এভাবেই ভবিষতে লাভের আশায় তিনি ধরে রেখেছেন মুরগির খামার।


এদিকে ব্রয়লার (সাদা) জাতের মুরগি খামারিদের অবস্থা একই। সাদা জাতের মুরগির খামারি আরমান আলী প্রধান বলেন, আমি মনসাপুর এলাকায় একটি শেড ভাড়া নিয়ে মুরগি তুলেছি। গেলো চালানে কিছুটা লাভ হয়েছে। তবে এবার মুরগির খাদ্যসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু মুরগির দাম কমে গেছে। প্রতিকেজি বয়লার (সাদা) মুরগি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। এতে লাভতো দূরের কথা আসল তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে।


উপজেলার ইটাই গ্রামের পোল্ট্রি মুরগি খামারি নাসির উদ্দীন বলেন, লোকসান গুনতে গুনতে শেডে মুরগি তোলাই বন্ধ রেখেছি। দেখি কতদিনে মুরগির বাজার বাড়ে এবং প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম কমে। তখন হয়তো আবার শেড চালু করবো।


এদিকে স্থানীয় হিলি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি সোনালি জাতের মুরগি ২২০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 


হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কাজী মাহাবুবুর রহমান বলেন, হাকিমপুর উপজেলায় ১২৫টি বিভিন্ন জাতের মুরগির খামার আছে। রোগ প্রতিরোধে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।