মৌলভীবাজারের ঐতিহাসিক গয়ঘর 'খোজার মসজিদ' প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এই মসজিদটি ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় সুলতান শামস উদ্দিন ইউছুফ শাহের শাসনামলে, হাজী আমীরের পৌত্র ও মন্ত্রী মজলিস আলম দ্বারা। মসজিদটি বর্তমানে ৫৪৯ বছর পুরোনো এবং এটি এখন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামে অবস্থিত। এর অপূর্ব নকশা ও কারুকার্য এখনো স্থানীয়দের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব রাখে এবং এটি মুসলিম ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মসজিদটির নির্মাণশৈলী এতটাই সুন্দর যে, এটি ইতিহাসের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এর গম্বুজ, দেয়াল, কারুকাজ এবং শিলালিপি প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক বিরাট নিদর্শন। মসজিদের ভেতরে একটি কৃষ্ণ পাথরের শিলালিপি রয়েছে যা বেশ পুরনো। এই শিলালিপিটি ইতিহাসের গহন কিছু তথ্য ধারণ করে। এছাড়াও, মসজিদের দেয়ালে একটি 'বাঘের পায়ের চিহ্ন' রয়েছে, যা স্থানীয়দের মতে, সেই সময়ে এলাকায় বাঘের আনাগোনা ছিল।
মসজিদের ভেতরের অংশের সৌন্দর্য অসাধারণ। মসজিদের প্রাচীন গম্বুজের সাদা রঙ, টালি যুক্ত মেঝে, এবং দেয়ালের বিভিন্ন আরবি লেখা ও ফুল-লতার ছবি এটি অত্যন্ত ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান করে তোলে। একসময় এই মসজিদটির গম্বুজ ভেঙে গেলেও গ্রামবাসীর সাহায্যে পুনরায় সংস্কার করা হয়। তবে, ১৯৮৪ সালে একটি বড় সংস্কারের সময় মসজিদটির কিছু পুরনো সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়াও, এই মসজিদের পাশে একটি ছোট পুকুর রয়েছে যেখানে গজার মাছ খেলা করে, এবং এখানকার ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় হাজার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। মসজিদের আশেপাশে একটি কবরস্থানও রয়েছে, যা মসজিদের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
মসজিদটির নামকরণের পেছনে কিছু রহস্য রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, এটি খাজা ওসমান নামক এক বীরের নাম থেকে এসেছে, যিনি বাংলার সুবেদার মানসিংহের কাছ থেকে পালিয়ে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে, এর নামকরণের নির্দিষ্ট ইতিহাস সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত নয়।
এখন মসজিদটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। বহু লোক আসে এই স্থাপত্যশিল্পের অভিজ্ঞান দেখতে এবং এখানে নামাজ পড়তে। স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের কাছে এটির সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে, ইউনেস্কোতে এই মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাজ উদ্দিন বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই মসজিদটির সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা জানেন না, তবে তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।