বিশ্বজুড়ে নিরবে ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ঢেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
বিশ্বজুড়ে নিরবে ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ঢেউ

বিশ্বজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাবের জন্য বর্তমানে ওমিক্রনকে প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে। ধরনটি বিএ১ নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ তার চূড়া ছুঁয়েছে।


ওমিক্রনের আরেকটি উপধারা বিএ.২-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিএ.১-কে ছাপিয়ে যাচ্ছে এটি। বিজ্ঞানীদেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন এই উপধারটি।


ভাইরাস ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট জিআইএসএআইডি বলছে, নভেম্বরে ওমিক্রন ধরনটি শনাক্তের পর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৮ দশমিক আট শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী বিএ১। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বেশ কয়েকটি দেশের প্রাদুর্ভাবে বিএ.২ উপধারার প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে।


বিএ.১ ও বিএ.২ ছাড়াও ওমিক্রনের আরও দুটি উপধারা রয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে বিএ.১.১৫২৯ ও বিএ.৩। জিনগতভাবে সবগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রতিটি উপধারা রূপান্তরিত হওয়ার পর তাদের আচরণও বদলে যায়।


সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বিকাশ নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেড হাটচিনসন ক্যানসার সেন্টারের কম্পিউটেশনাল ভাইরোলজিস্ট ট্রেভর বেডফোর্ড। শুক্রবার টুইটারে তিনি বলেন, ডেনমার্কের করোনা সংক্রমণের ৮২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ৯ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আট শতাংশের জন্য দায়ী বিএ.২।


জিআইএসএআইডি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা প্রকল্পের সিকোয়েন্স উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি এমন দাবি করছেন। আগের ধরনগুলোর চেয়ে করোনার বিএ.১ সংস্করণের গতিবিধি পর্যালোচনা করা সহজ। কারণ হচ্ছে সাধারণ পিসিআর পরীক্ষায় যে তিনটি জিনের উপস্থিতি খোঁজা হয়, তার একটি এতে অনুপস্থিত।


যেসব নমুনায় ওই বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, ধরে নেওয়া যায় সেগুলোর সংক্রমণের কারণ বিএ.১। বিএ.২ কখনো কখনো গোপন সংক্রমণশীল উপধারা হিসেবে পরিচিত। এটিতে আবার একই ধরনের জিনের অনুপস্থিতি থাকে না। ডেল্টাসহ আগের ধরনগুলো যেভাবে আচরণ করেছে, বিজ্ঞানীরা বিএ.২ ধরনকে সেইভাবেই পর্যালোচনা করা হচ্ছে।


তারা জিআইএসএআইডির মতো পাবলিক ভাইরাস ট্র্যাকিং ডেটাবেজে জমা পড়া উপাত্ত থেকে এ ভাইরাসের বিস্তার বোঝার চেষ্টা করছেন।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্য ধরনের মতো বিএ.২ এর সংক্রমণও করোনার পরীক্ষার র‌্যাপিড কিট দিয়ে শনাক্ত করা যায়। তবে ওই সংক্রমণের জন্য কোন ধরন দায়ী, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।


প্রাথমিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিমধ্যে অতিসংক্রামক হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বিএ.১ প্রকোপকেও ছাড়িয়ে গেছে বিএ.২ ভাইরাস। কিন্তু ওমিক্রনসংশ্লিষ্ট এই প্রাদুর্ভাব টিকার সুরক্ষাবলয়কে ফাঁকি দিতে পারে কি না, এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।


ডেনমার্কের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বিএ.১ ভাইরাসের চেয়ে বিএ.২ সম্ভবত দেড়গুণ বেশি সংক্রামক। কিন্তু এতে সম্ভবত রোগ তীব্র আকার নেয় না।


২৭ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, কারও শরীরে বিএ.২ সংক্রমণ ঘটলে তার পরিবারেও তা ছড়ানোর হার (১৩ দশমিক ৪ শতাংশ) ওমিক্রনের সাধারণ ধরনটির চেয়ে (১০ দশমিক ৩ শতাংশ) বেশি। তবে টিকার কার্যকারিতার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।


শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এগোন ওজার বলেন, এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, যারা বিএ.১ ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা বিএ.২ থেকে সুরক্ষিত কি না। ডেনমার্কের জন্য প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ইউরোপের দেশটির কোনো কোনো এলাকায় বিএ.১ প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা গেছে। আবার সে সব অঞ্চলে বিএ.২ ভাইরাসের প্রকোপও বাড়তে দেখা গেছে।


এই চিকিৎসক বলেন, যদি বিএ.১ সংক্রমণ বিএ.২ থেকে রক্ষা করতে না পারে; তাহলে মহামারির এই ঢেউ দুই কুঁজওয়ালা উটের মতো হয়ে দাঁড়াবে। আসলে কী ঘটবে সেটা খুব দ্রুত জানা প্রয়োজন। তবে এর মধ্যেও একটি সুখবর হল, টিকা এবং বুস্টার ডোজ এখনও মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে সুরক্ষা এবং মৃত্যু থেকে বাঁচাচ্ছে।


অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞান সংস্থা সিএসআইআরও’র করোনার টিকা গবেষক অধ্যাপক শীষাদ্রি ভাষাণ বলেন, ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জিআইএসএআইডি’র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০, ৮১১, বিএ.২ সিকোয়েন্স পাওয়া গেছে। যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ২২টি সিকোয়েন্স রয়েছে। কিন্তু ডেনমার্ক (৮৩৫৭), ভারত (৭১১) ও যুক্তরাজ্যে (৬০৭) থেকে ৯০ শতাংশ সিকোয়েন্স এসেছে।


তিনি বলেন, আমাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে যে প্রমাণাদি পাচ্ছি, তাতে বিএ.২ সংক্রমণ অতি দ্রুত হলেও রোগের তীব্রতা কম দেখা গেছে। কাজেই সবাইকে শান্ত থাকতে হবে আর টিকা নিতে হবে, করোনা প্রতিরোধের সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।