সীমান্ত বন্ধ করুন, বিজিবির পাশাপাশি সীমান্তে সেনাবাহিনী নামান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ৩১শে আগস্ট ২০১৯ ১১:২৫ অপরাহ্ন
সীমান্ত বন্ধ করুন, বিজিবির পাশাপাশি সীমান্তে সেনাবাহিনী নামান

কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসনকে ভারতের ‘আভ্যন্তরীন বিষয়’ বলে স্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার! কিন্তু এবার আসামের প্রায় বিশ লক্ষ মানুষকে বাংলাদেশী নাগরিক বলে বাংলাদেশে বিতাড়নের যে উদ্যোগ ভারত সরকার গ্রহন করেছে, সেটাও কি ভারতের ‘আভ্যন্তরীন বিষয়’ বলে স্বীকার করবে বাংলাদেশ সরকার? দেশ বিভাগ ও যুদ্ধ কবলিত এই উপমহাদেশে মাইগ্রেশন একটি বহু পুরোনো এবং স্বীকৃত ইস্যু! ভারতের জ্যোতি বসু, সুচিত্রা সেন, সমরেশ মজুমদার। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফ। বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ। এরা সবাই মাইগ্রেট করেছে নিজ রাষ্ট্র থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। কিন্তু এই স্বীকৃত ইস্যু নিয়ে সর্ব আসাম গণসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলনের নামে সংখ্যালঘু মুসলিম খেদাও মিশন নিয়ে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ৩ শাতাধিক মুসলিম হত্যা এবং দেড় হাজারের বেশী মুসলমানকে আহতের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ১

৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে আসামের মরিগণ জেলায় মোহাম্মাদ হোসেন নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমান্দ্র নারায়ণ নামের এক প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। হেমান্দ্র নারায়ণ ২৫ বছর ধরে ঐ এলাকা শাসন করে আসছিলেন। এতে করে গণসংগ্রাম পরিষদ প্রতিশোধ নেশায় পাগল হয়ে যায়। যার ফলে ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হয় নীল গনহত্যা। ৬ ঘণ্টা স্থায়ী এই হত্যাযজ্ঞে ৫০০০ মুসলিম হত্যা করা হয়েছিল। যার মধ্যে অধিকাংশ ছিল নারী ও শিশু। এরপর ২০১২ সালে আসামের কোকড়াঝড় শহরে আবারো মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ভূমির মালিকানা নিয়ে মুসলিম বিরোধী এ দাঙ্গায় ৪৩ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হয়। আসলে ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী সরকার শুধুই আসামের মাটি চাইছে, আসামের ভোট চাইছে। আসামের মাটি তাদের প্রিয়, আসামের মানুষ নয়। আর এটাকেই বলে ‘পোড়ামাটি নীতি’। যেমনটা তারা কাশ্মীরে চেয়েছে।

বাংলাদেশের সামনে এটা এক কঠিন দুঃসময়। বাংলাদেশ সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে হবে, ভারতের বিশ লক্ষ মানুষকে বাংলাদেশী নাগরিক বলে বাংলাদেশে বিতাড়নের প্রচেষ্টা ভারতের ‘আভ্যন্তরীন বিষয়’ নয়। এটার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থহানীই ঘটবে সবচেয়ে বেশী। এই কথা বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ্যে বলতে হবে। সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচারনা চালাতে হবে। দলমত নির্বিশেষে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে এই আগ্রাসনের জোড় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অনতিবিলম্বে সীমান্ত বন্ধ করতে হবে। তিন স্তরের সীমান্ত চেকপোষ্ট বসাতে হবে। বিজিবির পাশাপাশি সীমান্তে সেনাবাহিনী নামাতে হবে। যে কোন রকমের পুশইনের কঠোর জবাব দিতে হবে। একটা পুশইন হলে দশটা পুশব্যাক করে জবাব দিতে হবে।

যেহেতু এটা ভারতের একটি ধর্মীয় ইস্যু। তাই সবার আগে আমাদের নিজেদের ধর্মীয় সম্পৃতি সুরক্ষিত রাখতে হবে। এটা ভারতের হিন্দু-মুসলিম ইস্যু। আর তাই, কোনভাবেই এটাকে আমাদের হিন্দু-মুসলিম ইস্যু বানানো যাবে না। এটা ভারতীয় নাগরিকত্বেরও ইস্যু। ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী সরকার আসামের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে বাংলাদেশে বিতাড়নের যে নগ্ন খেলায় নেমেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এর কঠিন থেকে কঠিনতম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় স্বার্থে নোবেল কিংবা মানবতার আম্মা উপাধির লোভ সংবরণ করতে হবে। ভারতকে যা দিয়েছেন, ভারত তা কখনই তা সারাজীবন মনে রাখবেনা! হ্যাঁ, বিনিময়ে ভারত শুধু তার বিশ লক্ষ নাগরিক বাংলাদেশকে দিয়ে দিবে! ড. তুহিন মালিক

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব