স্বল্প রানের লক্ষ্যে নেমে শ্বাসরুদ্ধকর জয় কুমিল্লার

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২২শে জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
স্বল্প রানের লক্ষ্যে নেমে শ্বাসরুদ্ধকর জয় কুমিল্লার

স্বল্প রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত উইকেটের পতন হলে হারের শঙ্কা জাগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিবিরে। সময়ে সময়ে রঙ বদলাতে থাকা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সিলেট সানরাইজার্সকে ২ উইকেটে হারায় ইমরুল কায়েসের দল।


মাত্র ৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সিলেটের স্পিনারদের তোপের মুখে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দুবারের চ্যাম্পিয়নরা। দলীয় ৮৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছিল কুমিল্লা। তবে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে তানভীর ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন উইকেটকিপার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। 


স্বল্প লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ফাফ ডু প্লেসির উইকেট হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে চাওয়া ডু প্লেসি এদিন ৭ বলে ২ রান করে সোহাগ গাজীর শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ক্যামেরন ডেলপোর্টকে নিয়ে ধীরে ধীরে ছোট লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকেন। তবে সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ান সোহাগ গাজী।


ক্রিজে আধিপত্য করতে থাকা ডেলপোর্টকে ফেলেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। সাজঘরে ফেরার আগে এক বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১৯ বলে ১৬ রান করেন এই প্রোটিয়া ব্যাটার। তবে একপ্রান্ত আগলে ধরে ব্যাট চালান মুমিনুল। তৃতীয় উইকেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ঝড় তোলেন ভিক্টোরিন্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তবে তাকে পিচে আধিপত্য করতে দেননি সিলেটের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।


একই ওভারে তার শিকার মুমিনুল ও ইমরুল। দলীয় ৪৪ রানে সৈকতের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল । ২০ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক। তার ইনিংসটি সমান এক চার ও ছয়ের মারে সাজানো ছিল। জাতীয় দলে উপেক্ষিত ইমরুল এদিন ৪ বলে এক ছয় ও চারের সাহায্যে ১০ রান করেন।


দলীয় ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে কুমিল্লা। এরপর নাজমুল ইসলাম অপু বোলিংয়ে এসে আরিফুল হকের উইকেটটি তুলে নিলে জয়ের আশা ক্ষীণ হয়ে যায় দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের। 


তবে উইকেটে থাকা নাহিদুল ইসলামের ব্যাটে তখনো আশা বেঁচে ছিল ভিক্টোরিয়ান্সের। ষষ্ঠ উইকেটে মাঠে নামা করিম জানাতও দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন। দুই বাউন্ডারির সাহায্যে ১৩ বলে ১৮ রান করা করিমকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে নাহিদুলকে ফেরান নাজমুল অপু। মাঠ ছাড়ার আগে এক ওভার বাউন্ডারির সাহয্যে তিনি ১৬ বলে ১৬ রান করেন। সাত ব্যাটারকে হারিয়ে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হারের শঙ্কা জেগে ওঠে কুমিল্লা শিবিরে। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন লড়াই চালিয়ে গেলেও অপরপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে ইমরুলের দল।


সিলেটের স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু ১৭ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন। দুটি করে উইকেট শিকার করেন সৈকত ও সোহাগ গাজী।


এর আগে বিপিএলের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯৬ রানে গুটিয়ে যায় সিলেট সানরাইজার্স। মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে সিলেটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যৌক্তিক ব্যবহার করে প্রথম থেকেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দলকে চাপে রাখে মুস্তাফিজুর রহমানরা। পাওয়ার প্লেতে রান তোলার বদলে উইকেট বিলিয়ে দেন সিলেটের দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও কলিন ইনগ্রাম। ৯ বলে ৩ রান করা বিজয়কে সাজঘরে ফেরান নাহিদুল ইসলাম। ৩ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ২০ রান করা ইনগ্রামকে ফেরান শহিদুল ইসলাম। শেষ পর্যন্ত সানরাইজার্সের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন এই প্রোটিয়া ব্যাটার। 


দুজনের বিদায়ের পরে নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে সানরাইজার্স শিবির। মোহাম্মদ মিঠুন ৫ আর রবি বোপারা ১৭ রান করে মাঠ ছাড়েন। খাদের কিনারে পড়া দলকে উদ্ধার করতে পারেননি অধিনায়ক মোসাদ্দেক। ৬ বল মোকাবিলা করে তিনি তানভীর বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। মাঝেমধ্যে ব্যাট প্যাড হাতে তুলে নেয়া ব্যাটসম্যান অলক কাপালিও এদিন জ্বলে উঠতে পারেননি। টেস্ট মেজাজে ১৪ বল খেলে রান আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬ রান। ৬৫ রান তুলতেই তারা ৭ উইকেট হারিয়ে বসেন। 


এরপর কেসরিক উইলিয়ামসকে নিয়ে অবশ্য দলের হাল ধরেন গাজী। তবে দুইজনকে ২২ রানের বেশি জুটি গড়তে দেননি আফগান বোলার করিম জানাত। কেসরিক ১৩ বল মোকাবিলা করে ৯ রান করেন। দলের সংগ্রহ যখন ৯৪, তখন তুলে মারতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দনে সোহাগ গাজী। মোস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে তিনি ১৯ বল মোকাবিলা করে ১২ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে সানরাইজার্সের ইনিংস। ভিক্টোরিয়ান্সের বোলারদের মধ্যে ফিজ, নাহিদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম দুটি করে উইকেট শিকার করেন।