তদবীর ছাড়াই সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে জুন ২০২২ ০৮:৫৭ অপরাহ্ন
তদবীর ছাড়াই সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোন তদবীর কাজে আসবে না। এবারের মৌখিক পরীক্ষা অনেকটাই ব্যতিক্রম। বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে তদবির ছাড়াই ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তিন ধাপে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া শেষ হয়েছে।


৮০ নম্বরের এই পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ১৩ লাখ চাকরিপ্রার্থী। প্রথম ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪০ হাজার ৮৬২ জনের মৌখিক পরীক্ষা গত ১২ জুন থেকে শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষায় ৫৩ হাজার ৫৯৫ জন ও তৃতীয় ধাপে ৫৭ হাজার ৩৬৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।


তাদের মৌখিক পরীক্ষা এখনো শুরু হয়নি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হিসেবে সাড়ে ৩ জনের মধ্যে একজন প্রার্থী নিয়োগ পাবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে মৌখিক পরীক্ষা নিত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলার একজন বিদ্বান ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড।


সাধারণত বিদ্বান ব্যক্তি বেসরকারি লোক হওয়ায় অনেক বেশি তদবিরের সুযোগ ছিল। তার মাধ্যমে বোর্ডের অন্য সদস্যদেরও প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার বিদ্বান ব্যক্তির পরিবর্তে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিন্টেনডেন্টকে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


সে কারণে তদবিরের সুযোগ কমে গেছে। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বিভাজনও তদবিরের সুযোগ কমিয়ে এনেছে। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মধ্যে ১০ নম্বর রাখা হয়েছে শিক্ষা সনদের জন্য। মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) ক্ষেত্রে পৃথকভাবে প্রথম বিভাগ বা জিপিএ-৩ বা তদূর্ধ্ব পেলে একজন প্রার্থী পাবেন ৪ নম্বর, দ্বিতীয় বিভাগ বা জিপিএ-২ থেকে ৩ এর কম পেলে পাবেন ৩ নম্বর এবং তৃতীয় বিভাগ বা জিপিএ-১ থেকে ২ এর কম পেলে পাবেন ১ নম্বর।


আর স্নাতক বা সমমানের ক্ষেত্রে প্রথম বিভাগ বা সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ৩ ও ৫-এর মধ্যে ৩.৭৫ বা তদূর্ধ্ব পেলে ২ নম্বর, দ্বিতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ২.২৫ থেকে ৩-এর কম ও ৫-এর মধ্যে ২.৮ থেকে ৩.৭৫-এর কম পেলে ১ নম্বর পাবেন চাকরিপ্রার্থীরা। আর বাকি ১০ নম্বরের মধ্যেও বিভাজন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যক্তিত্ব, প্রকাশ ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।


নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সনদের জন্য যে নম্বর আছে সেখানে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের কম বা বেশি দেওয়ার সুযোগ নেই। বাকি ১০ নম্বরের মধ্যে একজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করলেই তাকে ৪ দিতে হবে। আর বোর্ডে সাধারণত সবাই পরিষ্কার পোশাকে স্মার্ট হয়ে আসেন। আর অন্য কোনো প্রশ্ন না পারলেও তার পড়ালেখা বা বাড়ি সম্বন্ধে সবাই পারে। তাহলে তাকে কমপক্ষে ৬ দিতে হবে।


আর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে তাকে ৯ পর্যন্ত দেওয়া হবে। আর যে তদবির করবে সেও সর্বোচ্চ ৯ নম্বর পর্যন্ত পেতে পারে। ফলে তদবির করে ২ বা ৩ নম্বরের বেশি পাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যার লিখিত পরীক্ষায় নম্বর কম তিনি মৌখিকে ২ নম্বর বেশি পেলেও চাকরি সুযোগ নেই।


মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এরপরও হয়তো তদবির হবে। প্রার্থীরা টাকা-পয়সার লেনদেনও করতে পারে। কিন্তু সেই তদবিরের বেশিরভাগই মৌখিক পরীক্ষা বোর্ড পর্যন্ত পৌঁছায় না। যারা তদবির করেন তারা সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছেই যান।


ফলে দেখা যায়, একজনের কাছেই ২০০, ৩০০ বা ৫০০ তদবির জমা পড়ে। তিনি এসব প্রার্থীর জন্য কোনো সুপারিশ না করলেও অর্ধেকের চাকরি এমনিতেই হয়ে যায়। প্রভাবশালী ব্যক্তি যাদের চাকরি হয়নি তাদের টাকা ফেরত দেন। বাকিদের টাকা তো ফেরত দিতে হয় না।


মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এবার প্রথম ধাপের পরীক্ষার চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা কঠিন হয়েছে। তাই প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় যারা ৬০ বা এর বেশি নম্বর পেয়েছেন, তাদের চাকরি অনেকটাই নিশ্চিত।


আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ৫৫ নম্বর বা এর বেশি পেলেই চাকরির সুযোগ রয়েছে। যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেয়েছে তা জানার সুযোগ নেই। তবে প্রার্থীরা তাদের দেওয়া উত্তর মিলিয়ে এ ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হতে পারেন।


অবশ্য, সহকারী শিক্ষকের চাকরি কোটা অনুযায়ী হয় বলে কিছু এলাকায় একটু বেশি নম্বর পেয়েও অনেকে চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আবার অনেক এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পেয়েও চাকরি পেতে পারেন। 


জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজন।


তিনি বলেন, এজন্য আমরা চাই প্রাথমিকে মেধাবীরা আসুক। প্রকৃত মেধাবীদের চাকরির সুযোগ করে দিতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বিভাজন করে দিয়েছি। সরকারি নিয়োগে কোনো বেসরকারি লোকের মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডে থাকার সুযোগ আমরা দেইনি। এসব উদ্যোগের জন্য এবার তদবির নেই বললেই চলে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা করছি আমরা।


তিনি আরও বলেন, আমার বা অন্য কারো নাম ব্যবহার করে চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখালে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার জন্য বলেছেন। সেইসাথে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছেন সিনিয়র সচিব।