স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত বরিশালে, সংক্রমন বৃদ্ধির আশংকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ১৬ই জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত বরিশালে, সংক্রমন বৃদ্ধির আশংকা

করোনা (ওমিক্রন) সংক্রমন থেকে রক্ষার জন্য ১৩ জানুয়ারী থেকে সারা দেশে ১১টি বিধিনিষেধ জারি করলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে বরিশালে। নগরীর পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে বাজার, বিপনী বিতান ও ছোটবড় সব ধরণের পরিবহনে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও জরিমানা করা হলেও এখানকার মানুষ ঠুনকো অজুহাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় বরিশালে হঠাৎ করেই বাড়ছে করোনা সংক্রমন। গত দুদিনে বরিশালে করোনা সনাক্তের হার প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। আর শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে আইসিইউসহ মোট ১৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।


সরেজমিনে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, নৌবন্দর ও হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই নেই। কারো মুখে মাস্ক নেই। যে যার মতো করে চলাফেরা করছে। অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রা, বাস যাত্রীদের কারো মুখে মাস্ক নেই। এ ব্যাপারে বাসের স্টাফরাও উদাসীন। ঢাকাগামী যাত্রী সৈয়দ জাহাঙ্গীর বলেন, “টিকার দুই ডোজ নিয়েছি। এ সময় তিনি অন্য যাত্রীদের দেখিয়ে বলে অনেকেতো টিকা-ই নেয়নি”। অটোযাত্রী রফিকুল বলেন, করোনা কমে গেছে (!) তাই মাস্ক ব্যবহার করেন না। বরিশাল আদালতপাড়ায় দেখা গেছে, বিচারপ্রার্থীদের কারো মুখেই মাস্ক নেই। তাছাড়া আদালতের সামনে একজন আরেকজনের গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে। বরিশাল নৌবন্দরে অভ্যন্তরী রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে মাস্ক ছাড়াই যাত্রী উঠাতে দেখা গেছে। তাছাড়া লঞ্চের স্টাফদেরও কারো মুখে মাস্ক নেই।


এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে মাক্স না পড়লে সেবা দেওয়া হবেনা। প্রতিটি শপিং মল, দোকান, খাবার হোটেল, মাছ বাজার, কাচা বাজারসহ দর্শনীয় স্থানে মাস্ক পড়তে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে করা হচ্ছে মাইকিং। কিন্তু ঘোষনা দেওয়ার তৃতীয় দিনেও বাস্তব চিত্র উল্টো দেখা গেছে। যদিও বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধি নিষেধের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন নগরের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামুলক প্রচার অভিযানের পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পাশাপাশি অনেককে জরিমানা এবং সচেতন হওয়ার আহবান জানাচ্ছেন। তবে তারা চলে গেলে পূর্বের চেহারায় ফিরে আসে লোকজন।


বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। একজন সচেতন নাগরিকের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। শুধু নির্দেশনা দিলে হবে না, সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এ জন্য মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সুস্থ থাকতে চাইলে এগুলো অবশ্যই মানতে হবে।


বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, করোনা ওমিক্রনের সংক্রমন থেকে রক্ষার পাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। বরিশালের মানুষ সরকারী নির্দেশ মেনে চলবেন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, সরকারী বিধিনিষেধ অমান্যকারীকে প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করা হবে। করোনা ওমিক্রনের সংক্রমন থেকে বাঁচতে হলে মাক্স এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সবাইকে।


অপরদিকে গত দুদিনে বরিশালে নমুনা পরীক্ষায় ৮.০৪ শতাংশের শরীরে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও ওই সময়ে কোন রোগী মৃত্যুবরণ করেননি। তবে এই অঞ্চলে করোনার সংক্রমন দিনে দিনে বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা: হুমায়ুন শাহীন খান জানান, নতুন করে ২১ জন শনাক্তের মধ্য দিয়ে বিভাগে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫ হাজার ৪৪৬ জন এবং মারা গেছেন ৬৭৯ জন। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ জনের। যা নিয়ে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৮৭ জন। পটুয়াখালীতে নতুন একজন নিয়ে মোট ৬ হাজার ২৪৪ জন, ভোলায় নতুন শনাক্ত ২ জন নিয়ে মোট ৬ হাজার ৮৭৩ জন, পিরোজপুরে নতুন করে কেউ শনাক্ত না হওয়ায় মোট ৫ হাজার ৩১০ জন, বরগুনায়ও নতুন শনাক্ত না হলেও মোট শনাক্ত ৩ হাজার ৯৬৬ জন এবং ঝালকাঠিতে নতুন ২ জন নিয়ে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৬৬ জন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া খান স্বপন জানান, শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৪ জন ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ১০২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১২ জনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ শনাক্তের হার ১১.৭৬ শতাংশ যা এই বছরের সর্বোচ্চ।