লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে সংসদে উত্তেজনা, মন্ত্রী যা বললেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২২ ০৯:১২ অপরাহ্ন
লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে সংসদে উত্তেজনা, মন্ত্রী যা বললেন

যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াতের ‘লবিস্ট’ নিয়োগের বিষয়ে জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, এসব ‘অসত্য’ তথ্যের বিপরীতে সত্য তুলে ধরতে সরকার সেখানে ‘পিআর প্রতিষ্ঠান’ নিয়োগ দিয়েছে।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ নিয়োগ করে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ নিয়োগ করে বলেও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে সরকার এসব অপপ্রচার বন্ধে সত্য তথ্য তুলে ধরে দেশের ভাবমূর্তি ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পিআর ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছে।  



বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে ড. মোমেন এ তথ্য জানান।


সংসদে দেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পুরো বক্তব্য সময় সংবাদের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-


‘মাননীয় স্পিকার,

আপনাকে ধন্যবাদ। গত ১৭ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনে মাননীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (ঢাকা ৪) সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা আরোপিত sanction এর বিষয়ে কিছু মতামত প্রদান করেন এবং ব্যাখ্যা চান।


একই দিন আমার সহকর্মী মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর বক্তব্য প্রদানকালে বিএনপি-জামায়াতের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু অপতৎপরতার বিবরণ এবং দালিলিক প্রমাণ দাখিল করেন। তারই প্রত্যুত্তরে ২০ জানুয়ারি তারিখে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ হারুনুর রশীদ (চাপাইনবাবগঞ্জ-৩) এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত আসন-৫০) কিছু বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নতুন করে মিথ্যা তথ্যের অবতারণা করেন। একই দিন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্জ-৩) বিএনপি দ্বারা লবিস্ট নিয়োগের বিস্তারিত জনাতে চান এবং সরকার কোনও লবিস্ট নিয়োগ করেছে কি এ বিষয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেন। এরই প্রেক্ষিতে আজকে আমি আপনার অনুমতিক্রমে ৩০০ বিধিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করছি।


মাননীয় স্পিকার,

শুরুতে আমি জানাতে চাই যে, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের এবং প্রতিষ্ঠানের লবিস্ট নিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী একটি বৈধ প্রক্রিয়া। পৃথিবীর অনেক দেশ এবং প্রতিষ্ঠানই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে।আমার সহকর্মী মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম ১৭ জানুয়ারি সংসদে তাঁর বক্তব্যের পরদিন সাংবাদিকদের জানান যে, জনকূটনীতির অংশ হিসেবে আমরা BGR কে ২০১৪-২০১৫ সালে নিয়োগ দেই। যদিও এটি একটি লবিস্ট ফার্ম, আমরা মূলতঃ দেশ বিরোধীদের নেতিবাচক propaganda counter করে সত্যকে তুলে ধরতে এবং দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে জনসংযোগমূলক কাজ করার জন্য (PR) নিয়োগ দেই; রাজনৈতিক লবিস্ট হিসেবে নয়। তবে কোন কোন ব্যবসায়িক বা সিভিল সোসাইটি সংগঠনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট কাজ করতে পারে, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে সততা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমি কি প্রেক্ষাপটে BGR-কে নিয়োগ করা হয়েছিল সে বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। সেই সময় আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দন্ডাদেশ কার্যকর বাধাগ্রস্ত করার জন্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং মীর কাশেম আলীর অর্থায়নে জামায়াত Toby Cadman এবং Akin Group- কে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র Department of Justice এর Foreign Agents Registration Act (FARA) Registration Unit website facu বিশদ বিবরণ দেয়া আছে। বাংলাদেশ বিরোধী এই সব প্রচারণা বন্ধের জন্যই সেসময় BGR-কে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।


অন্যদিকে আমাদের কাছে তথ্য আছে, বিএনপি ২০১৫ সালে Akin Gump নামক লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে যার মাধ্যমে Toby Cadman এর সঙ্গে তারা সংযুক্ত হয়। Toby Cadman এর মূল কাজ ছিল মার্কিন সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে লবিং করে এবং পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা, এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালানো। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুলিপি আমার সহকর্মী মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম উত্থাপন করেছেন এবং তা মাননীয় স্পিকারের দপ্তরে জমা আছে (সংযুক্তি-১) যা মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দেখাতে পারেন)। বিএনপি নিয়োগকৃত এইসব লবিস্টরা জাতীয় স্বার্থের তোয়াক্কা না করে পুরো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবরোধ দেওয়ার জন্যও লেখালেখি করেছে। যদিও তাদের এই হীন প্রচেষ্টাগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে, তবুও আমি অবাক হই এই ভেবে যে সমগ্র দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের কথা বলে বিএনপি যে পারতপক্ষে পুরো জাতির বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ালো তাতে কি তাদের বিবেক একবারও বাধা দিল না? বরঞ্চ সংসদে গত ১৭ জানুয়ারি এই তথ্যগুলো প্রমাণসহ উত্থাপন করা হলে বিএনপি শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ তা মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করেন।


মাননীয় স্পিকার,

এই Akin Gump গ্রুপ আয়ের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ফার্মগুলোর একটি, যাদের মাসিক সার্ভিস চার্জ সর্বনিম্ন ৪০,০০০ মার্কিন ডলার হতে শুরু করে প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। বিএনপির সঙ্গে তাদের চুক্তিপত্রগুলো আমার হাতে এসেছে (সংযুক্তি-২, যা মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংসদে দেখাতে পারেন)। এই যে তারা এতগুলো অর্থ বিদেশি ফার্মের পিছনে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে বিনিয়োগ করল; তারা কি এর প্রতিফলন রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশে ঘটিয়েছেন? – যা কি না গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর খারা ৪৪ (গণ) এবং ৪৪ (গগণ) অনুযায়ী বাধ্যতামূলক! তাদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাঠানোর সময়ে তারা কি বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ অনুমোদন নিয়েছেন? অনুমোদন নিয়ে থাকলে, তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে আইনের দৃষ্টিতে নিশ্চিতভাবেই অনুনোমোদিত অর্থ পাচার মানি লন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


Gump star strategies, এবং Rasky Partners নামক আরও দুইটি, অর্থাৎ সর্বমোট লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ FARA Registration Unit website এ দেখা যায় এই তিনটি লবিস্ট ফার্ম এর সঙ্গে বিএনপির অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে করা হয়েছে। আরও ৫টি লবিস্ট ফার্ম জামায়াত কর্তৃক পরোক্ষভাবে নিয়োগ দেয়া এসব লবিস্ট ফার্মের পিছনে শুধু বিএনপিরই কমপক্ষে চল্লিশ ডলার খরচ করেছে, website এ উল্লেখ আছে। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিএনপি-জামায়াতের এই অর্থের উৎস জানতে চেয়েছি।


এ প্রসঙ্গে আমি ২৪ মে ২০১৯ সালে প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেকেও লেখা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের একটি চিঠির উল্লেখ করতে চাই, যা কিনা FARA Registration Unit এর website এ আছে (সংযুক্তি-৩, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দেখাতে পারেন)। প্রধানমন্ত্রী শেখ ২০১৭ সালে যেখানে লাখ বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন এবং সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা কুড়িয়েছেন, সেখানে এই চিঠিতে মির্জা সাহেব রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের স্বদিচ্ছা নিয়ে মার্কিন সরকারের কাছে অপপ্রচার চালিয়েছেন এবং ভাসানচরকে অনিরাপদ আশ্রয় হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। দেশের স্বার্থবিরোধী তাঁর এমন লেখা আমাদের সত্যিই বিস্মিত করেছে। এমনকি তিনি বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্রের Indo Pacific Strategy এর হুমকি হিসেবে তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এ ধরণের মন্তব্য বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রে সহায়তা কার্যক্রম বন্ধেরও আহবান জানিয়েছেন। এমনকি আমি পররাষ্ট্র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রে আমার দ্বিপাক্ষিক সফরের প্রাক্কালে তারা বিএনপি মহাসচিবে এর স্বাক্ষরিত চিঠি এইসব লবিস্টদের মাধ্যমে পররাষ্ট্র সহ আরও অনেকের পৌঁছে দিয়ে আমার সঙ্গে বৈঠক না করার জন্য আহ্বান জানান। অবশ্যই তাদের নেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়, কারণ আমি সেই সফরে প্রায় ১০টির মতো উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করি।


মাননীয় স্পিকার,

সার্বিকভাবে বলতে হয়, বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী অপরাজনীতির সকল প্রমাণ আজ public domain এ প্রকাশিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই তারা এইসব কূটকৌশলে লিপ্ত। বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে তারা বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। নিজেদের অন্যায়কে আড়াল করতে তারা আজ সরকারকে দোষারোপ করছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।


মাননীয় স্পিকার,

এই প্রসঙ্গে আমি আপনার মাধ্যমে সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে চাই যে, আজ হতে বেশ কয়েক বছর আগে আমি তখন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলাম। তখনো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের উপর সরাসরি আঘাতে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সন্তান এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘ফিজিক্যালি হার্ম' করার পরিকল্পনা প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপিকর্মী রিজভী আহমেদ সিজারের বিরুদ্ধে। মামলা চলাকালীন সময়ে রিজভী আহমেদ সিজার আদালতে জানান যে, তিনি এবং তাঁর সহযোগী ইয়োহানেস থেলার মিলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য একজন এফবিআই স্পেশাল এজেন্টকে ঘুষ দেন। রিজভী আহমেদ সিজার আদালতে আরও জানান যে, এই কাজের জন্য বিএনপির হাই কমান্ড হতে সাড়ে চার কোটি টাকা পুরস্কার হিসেবে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল যা মার্কিন আদালতের নথিতে লিপিবদ্ধ আছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। (সংযুক্তি-৪, যা মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংসদে দেখাতে পারেন) বর্তমান এই লবিস্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের উপর আঘাত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই চলার পথ বিঘ্নিত করার জন্য বিএনপি-জামায়াত এই সকল হীন কাজে অব্যাহতভাবে লিপ্ত রয়েছে।


মাননীয় স্পিকার,

এইবার আমি RAB এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের sanction বিষয়ে আপনার মাধ্যমে মহান জাতীয় সংসদকে অবহিত করতে চাই, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার RAB এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে পূর্বালোচনা ছাড়াই, যা অত্যান্ত দুঃখজনক এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী। ১০ ডিসেম্বর ২০২১ এ নিষেধাজ্ঞা দানের পরের দিনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বিষয়ে সরকারের উদ্বেগ প্রতিবাদ জানিয়েছে।


এর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী Antony Blinken আমাকে ফোন করেন। সে সময়ও আমি তাঁকে আমাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছি এবং অবিলম্বে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার আহবান করেছি। তিনি দুই সরকারের মাঝে এ বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পরবর্তীতে আমি তাঁকে যে চিঠি দিয়েছি সেখানেও একই বিষয় উল্লেখ করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমি সংশ্লিষ্ট মার্কিন আইন প্রণেতাদেরও শীঘ্রই চিঠি দিচ্ছি।


নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করার জন্য সরকার শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী করতে যাচ্ছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা শীঘ্রই ঢাকা এবং ওয়াশিংটনে কয়েক দফা সংলাপে বসছি। উভয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সফরও শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে। আগামী মার্চে দুই দেশের Partnership dialogue এবং এপ্রিলে Security dialogue অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও Economic partnership Consultation খুব শীঘ্রই হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সকল সংলাপ ও সফরকালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গ্লোবাল টেরোরিজম রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশে সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এই সাফল্যের পিছনে RAB সহ বাংলাদেশের অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।


পরিশেষে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভুতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকের গাত্রদাহের কারণ হচ্ছে। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই মূলমন্ত্র অনুসারে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধির নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশ ও জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তাই আমাদের লক্ষ্য এবং এ লক্ষ্য অর্জনের পথে এই সরকার আভ্যন্তরীণ বা বাইরের কোনো অনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।


মাননীয় স্পিকার,

এখানে আমি আরেকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ব্যাখ্যা করতে চাই। ১২টি এনজিও-র পক্ষ হতে জাতিসংঘকে লেখা একটি চিঠি নিয়ে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ধরনের propaganda speculation লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই চিঠি জাতিসংঘকে ৮ই নভেম্বর ২০২১ তারিখে লেখা হয়েছিল। এরপর দু’মাস গড়িয়েছে। এই দু’মাসে কখনই জাতিসংঘ থেকে এই চিঠির বিষয়ে কোনও ধরনের প্রশ্ন আমরা পাইনি। জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশকে হেয় করার এই ধরনের ঘৃণ্য অপচেষ্টা নতুন কিছু নয়। আগেও আমরা দেখেছি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ব্যাহত করার জন্য বিপক্ষ শক্তি সচেষ্ট ছিল। আমার কাছে এমন ভিডিও আছে যেখানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রকাশ্য জনসমাবেশে বলেছেন যে তিনি RAB-এর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে RAB-এর উচ্চতর বিদেশি প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ক্রয় বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।


এটি সহজেই অনুমেয় যে দু'মাস আগে লেখা একটা চিঠি নিয়ে হঠাৎ প্রেস রিলিজ ইস্যু করে এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের পেছনে নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধি কাজ করছে। চিঠির বিষয়বস্তু হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ হতে RAB সদস্যদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করা, এবং RAB-এর মত একটি কার্যকর ও চৌকষ বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো।


উল্লেখ্য, এই চিঠির বিষয়ে জাতিসংঘ মুখপাত্রকে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে জাতিসংঘ মুখপাত্র পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যারাই অংশগ্রহণ করেন তাঁদের প্রত্যেককেই individual human rights screening এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কাজেই এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত কারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার ন্যূনতম সুযোগ নেই। জাতিসংঘ মুখপাত্রকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বারংবার leading question করা হলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে অনড় থাকেন এবং পরিষ্কার করেন যে জাতিসংঘ human rights screening process টি অত্যন্ত কঠোর।


মাননীয় স্পিকার,

আমি আশা করি আমার এই ব্যাখ্যাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট দালিলিক প্রমাণগুলো, যার বেশিরভাগই মার্কিন বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে FARA Registration Unit পাওয়া যাবে, যা আপনাদের প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও কারও মনে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকলে আমার সহকর্মী মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম কর্তৃক ১৭ জানুয়ারি তারিখে সংসদে দাখিলকৃত দলিলগুলো দেখতে পারেন বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সংগ্রহ করতে পারেন। আমি আশা করব বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে মতানৈক্যের বিষয়গুলোতে রাজনৈতিকভাবে প্রক্রিয়ায় সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করবে, এবং দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে এমন কোন আচরণ বা উদ্যোগ রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী ও সাধারণ জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, আমরা যেন কোনও ক্ষুদ্র স্বার্থে জলাঞ্জলি না দেই।


সর্বশেষে, মাননীয় স্পিকার, আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি আহবান জানাবো সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃতাধীন সরকারের কর্মকান্ডগুলোকে তারা সমর্থন জানাবের এবং যে কোন ধরনের চক্রান্তমূলক উদ্যোগের সক্রিয় বিরোধীতা করবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতায় যেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়েছে, কিছু অভিযোগ থাকলেও এই স্থিতিশীলতার ফসলই হচ্ছে আমাদের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় বিরল। এই উন্নয়নের ফল সকল নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশের সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে। যে কোনও সমস্যা সমধানেও আমরা বদ্ধ পরিকর। কোনও ধরনের চক্রান্তই আমাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

আপনাকে আবারও ধন্যবাদ, মাননীয় স্পিকার।