কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অরক্ষিত হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা ছুঁটে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।এমন কি ঝুকিঁ নিয়ে বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে।তেমনি শনিবার বিকেলে পালিয়ে যাওয়ার পথে ৩১ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে উখিয়া থানা পুলিশ।ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে ঢাকা আন্তজার্তিক বিমান বন্দর থেকে ৩ রোহিঙ্গা নারী ও এক যুবক আটক হয়েছে।কক্সবাজারে পাসপোর্ট করতে গিয়ে নকল মা সহ গ্রেফতার হয়েছে রোহিঙ্গা তরুণী।প্রায়শ: এমন ঘটনা ঘটছে।তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্প সুরক্ষিত রাখা জরুরী মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।তাই ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা বাড়াতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়াও মাদকসহ অবৈধ পণ্য পাচার প্রতিরোধে মিয়ানমার সীমান্তেও কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণসহ আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দু’টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১৪ ও ১৬) গঠন করা জরুরি বলে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির একটি সভায় মত দেন পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় দায়িত্বরত সব বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে এপিবিএন-এর একটি ব্যাটালিয়নের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াত, বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ এবং মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়েও আলোচনা করেন তারা। যে কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো ও কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হয়। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেনা সদরের নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়েও বৈঠকে একমত পোষণ করা হয়।
ওই আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের অন্যতম সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্প এলাকার চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ জরুরি। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের তথ্য পাসপোর্ট অধিদফতরের ডেটাবেজের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে অবৈধ উপায়ে পাসপোর্ট গ্রহণ ও প্রতিহত করা সম্ভব হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক ও আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, রোহিঙ্গাদের গতিবিধি ক্যাম্প এলাকায় সীমিত রাখার জন্য ক্যাম্পের চারপাশে জরুরি ভিত্তিতে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে। এখন তারা কতদূর এগোতে পেরেছে সেটা জানি না। যদি তারা কোনও কারণে এ ব্যাপারে অপারগ হয়, তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন করার কথা জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর)। ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার বিষয়েও দ্বিমত রয়েছে সংস্থাটির। তাছাড়া এখনও অর্থের সংস্থানও করতে পারেনি তারা। তাই এ বিষয়ে এখনও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। ইউএনএইচসিআর আরেকটু দায়িত্বশীল হলেই এই প্রকল্পের অর্থ জোগাড় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও শরণার্থী সেলের প্রধান শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, প্রায় চার মাস আগে এ সেলের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। কিন্তু, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ সংক্রান্ত কোনও চিঠি এখনও তিনি পাননি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সেটা সমন্বয় করে থাকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে এবং বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজারের রামু’র সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার বিষয়টি তাদের এখতিয়ারে নেই। মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে সেই বিষয়ে তিনি অবহিত নন। তবে মাদকসহ সবধরনের অবৈধ পণ্য চোরাচালান প্রতিরোধে তাঁরা ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রেখেছেন তবে কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে কাঁটাতারের বেড়া নির্মিত হবে সঠিক জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।