বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসননগর,পক্ষিয়া ও বড়মানিকা ইউনিয়নের মেঘনা নদীর বেড়িবাঁধে বাস করা প্রায় তিন হাজার ছিন্নমূল পরিবারে ঈদ আনন্দের ছোঁয়া নেই। যদিও ওই এলাকা থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরবর্তী বোরহানউদ্দিন পৌর শহরের বিপণী বিতানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখলে মনে হয়না ছিন্নমূল পরিবারগুলো নিজেদের জন্য দূরে থাক সন্তানদের জন্য একটা নতুন কিনার সামর্থ নেই। ওই পরিবারগুলো অধিকাংশই জেলে পরিবার। অল্প কিছু সংখ্যক আছেন বর্গাচাষী। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা ছিল। এপ্রিল শেষে নদীতে পূর্ন উদ্যমে মাছ শিকারে গিয়ে প্রতিদিন ফিরছেন শূণ্যহাতে। নদীতে ইলিশ সহ অন্য প্রজাতির মাছের দেখা নেই। ফলে অভাব তাদের পিছু ছাড়ছেনা। কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা কাপড়ের আবদার থাকলেও পরিবারের কর্তার চাহিদা পূরণের টাকা নেই।
হাসাননগর ইউনিয়নের মেঘনা সংলগ্ন বেড়িবাঁধে বাস করা ১০-১২ বয়সের আতিক, শাকিব ও মিরাজের বাবা আ. মান্নান জানান, ত্রিশ হাজার টাকা দাদন নিয়ে নৌকা নামিয়েছেন। সারা দিন-রাত খেটে সংসারের খাবার খরচের মাছও জোটেনা। মন চাইলেও সন্তানদের নতুন জামা-কাপড় দেয়া সম্ভব না। একই এলাকার তামিম, সুমাইয়ার বাবা ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন,ভাত খাইতেই তিন দায়, আবার নতুন জামা! পাশ্ববর্তী মারুফ, সজিবের বাবা সিদ্দিক, জুনায়েদ ও মিতুর বাবা আলমগীর, রাসেল, তামান্নার বাবা মো. হারুন বলেন, ছোড (ছোট) পোলাপানগুলি নতুন জামা চাইয়া ত্যাক্ত(বিরক্ত) করে।
খাওন (খাবার) জোগার করতেই পারিনা, জামা দিমু ক্যামনে। একটু ক্ষেদের সাথে তারা বলেন, ঈদ আমাগো লইগ্যা(জন্য) না, যারা দালানে থাহে(বাস করে) তাগো লইগ্যা ঈদ। পক্ষিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের মিজান, আঃ সাত্তার,ফিরোজ মিয়া, শাহে আলম, নূরনবী, শেখ ফরিদ জানান, এতা কষ্ট কইর্যা (করে) নদীতে যাই। মাছের দেহা (দেখা) নাই। ভাত যোগার করতেই জান শেষ। নতুন জামা-কাপড় আমাগো পোলাপাইনের (ছেলে-মেয়েদের) কপালে ল্যাহে (লিখে) নাই। বড়মানিকা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাসিন্দা ইশরাফিল ও হালিমা বেগম জানান, ঈদ করমু ক্যামনে, নদীতে মাছ নাই। এ্যাহন (এখন) ভাত কাপড়ের লইগ্যা শরীলে(শরীরে) কুলায়না (সহ্য হয়না) হ্যাও (তাও) ব্লকের (ব্লক বাঁধের) কাজ করি। ঈদ আর পেলাপাইনের কথা মনে আইলে কষ্ট বাইর্যা (বেড়ে) যায়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।