ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মানিকা গ্রামে বিভিন্ন সবজী চাষ করে শূণ্য থেকে বর্গাচাষী রেশাদ আলী ও তার স্ত্রী ঝুমা বেগম অভাবকে দূর করে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। তারা দু’জন সমান তালে খেতে কাজ করেন। ঝুমা নিজে ভার্মিকাম(কেঁচোসার) উৎপাদন করেন। খেতে সার দেন, সেচ দেন, বালাইনাশক ছিটান। এরমধ্যে ঝুমাকে তার সংসার সামলাতে হয়। দুই সন্তানকে যথাসময়ে মাদ্রাসায় পাঠান। রোববার তাদের লাউ খেতে সবজী চাষ নিয়ে কথা বলেন রেশাদ আলী দম্পতি। তারা মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়।
ঝুমা বেগম ও রেশাদ আলী জানান, এ বছর প্রথমে তারা ৩২ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে প্রথমে মল্লিকা জাতের রেখা চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকার রেখা বিক্রি করেছেন। ওই জমিতে রেখা ওঠার পর একই জাতের লাউ চাষ করেন। খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি নেমেছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এখনও ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে তারা জানান। লাউ খেতের বিপরীত দিকে ৫৬ শতাংশ জমিতে কাতলা জাতের শিম চাষ করেছেন। মূলধন ছিল ২০ হাজার টাকা। ৭০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। খেতে এখনও শিম আছে। কৃষি বিভাগের বীজ সরবরাহ ও আর্থিক প্রণোদনায় ৩২ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
কমপক্ষে ৯ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া দেড় একর জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করেছেন। ৮০ হাজার টাকা খরচ হেেছ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২ লাখ টাকার উপর বিক্রি নামবে বলে তিনি আশাবাদী। রেশাদ আলীর স্ত্রী কৃষি উদ্যোক্তা ঝুমা বেগম জানান ওই সবজী চাষে তারা কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। ঝুমা ও রেশাদ আলী কেঁচো সার তৈরীর উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে গত দুই বছর শুধু তাদের উৎপাদিত কেঁচো সারই ব্যবহার করেন। এতে উৎপাদন খরচ কম হয়। পাশাপাশি ফলন বেশী হয়। পোকামাকড়ের আক্রমনও তুলনামূলক অনেক কম হয়। রেশাদ আলী জানান, ওই ব্লকের দ্বায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন তাকে পরামর্শের পাশাপাশি তদারকিও করেন।
বোরহানউদ্দিন আলিয়া মাদ্রাসা সড়কের দুই পাশে লাউ,শিম,কপি আর বিস্তৃত আলু খেত দেখে যে কারো চোঁখ জুড়িয়ে যাবে। পথচারীদের খেতে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবি আহমদ উল্যাহ আনসারী বলেন, রেশাদ আলী দম্পতির সবজী চাষ এ এলাকাকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। মনে হয় চিরায়ত বাংলার সবাক ছবি। সবজী চাষী রেশাদ আলী তার সাফল্যের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, আমি দরিদ্র কৃষক বাবার সন্তান। পরিবারের ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমি সেঝো। আমার ভাইরা সবাই কৃষিকাজ করে। আমার দরিদ্র কৃষক বাবার ভিটেমাটি ছাড়া কোন নিজস্ব জায়গা জমি নেই,আমার বাবাও অন্যের জমি চাষ করতো। অনেক অভাব অনটনে চলতো আমাদের সংসার।
পড়াশুনা কতদূর এ প্রশ্নে হতাশার সুরে তিনি জানান, প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাবের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আমাদের ঘরে ২ টি মেয়ে। বড় মেয়ে খাদিজা স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসায় দশম শ্রেণি আর ছোট মেয়ে আয়েশা পঞ্শ্রেচমণিতে পড়ে। সংসার চলাতে দিনমুজুরী করে অল্প অল্প করে স য় করতে থাকি। এরপর প্রতিবেশী শুক্কুর আলীর অনুপ্রেরণায় প্রথমে আমি মাত্র ৮ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি।
এতে অল্প কিছু টাকা লাভ হয়। আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে চাষ বাড়াতে থাকি এবং বেশ সফলতা পাই। শিম, কপি আর আলু উঠে গেলে একই জমিতে আখ চাষ করা হবে। রেশাদ আলী আর ঝুমু আক্তারের একটিই স্বপ্ন তাদের সন্তানদের সু-শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। কৃষিকাজ তাদের অভাব দূর করেছে। ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, রেশাদ আলী ও ঝুমু বেগম অত্যন্ত পরিশ্রমী। নারি হয়েও ঝুমু বেগম যে দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন তা সত্যিই বিরল ঘটনা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, রেশাদ আলী দম্পতি বোরহানউদ্দিনের সবজী চাষীদের মধ্যে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ। কৃষি অফিস সব সময় সর্বাত্বক সহযোগিতা করে আসছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।