ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও সরাইলের উপর নিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে। সরকারের পক্ষ থেকে ঢেউটিন দিয়ে সহায়তার কথা বলা হলেও বিভিন্ন কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘর মেরামত করতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্থরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টর্নেডোতে ওই দুই উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামের প্রায় দেড়'শ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে শত শত গাছপালা। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। নদীতে থাকা বেশ কয়েকটি নৌকাও তলিয়ে যায়। টর্নেডোর সময় রাস্তায় থাকা এম এ সোহেল তালুকদার নামে এক ব্যক্তি অসুস্থবোধ করার পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন। পোস্ট অফিসে কর্মরত ওই ব্যক্তির বাড়ি উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামে। এ ছাড়া এ ঘটনায় আরো অন্তত ১০ জনের মতো আহত হয়েছেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। পরবর্তীতে আবারো বৃষ্টি হওয়া তাঁদের বিপাকে পড়তে হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আর্থিক অবস্থার দৈন্যদশার কারণে নতুন ঘর উঠানো নিয়ে এখন তাঁরা শঙ্কায় আছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারকে ঢেউটিন ও খাদ্যসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফীসহ জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে দেখেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, শনিবার সকালে মেদির হাওড়ে তারা একটি ধোঁয়ার কুন্ডলির মতো দেখতে পান। এটি নাসিরনগর ও সরাইলের বিভিন্ন গ্রামে আঘাত হানে। এর মধ্যে নাসিরনগর উপজেলা সদরের ৭নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড, বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল, বেনিপাড়া, ইছাপুরা, শ্রীঘর গ্রাম, সরাইলের নোঁয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা, কুচনি, শান্তিনগরসহ বিভিন্নগ্রামের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরাইলের বুড্ডা গ্রামের দুলাল মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, হঠাৎ করে দেখি ধোঁয়ার মতো কুণ্ডলি উড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের সামনে তছনছ হয়ে কিছু বাড়ি। ওইসব বাড়ির টিনের চালাসহ আসবাবপত্র পর্যন্ত বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মনে হয়েছে এটা টনের্ডো। বেশ কয়েকটি এলাকায় এটি আঘাত হেনেছে।
নাসিরনগরের আশুরাইল গ্রামের সূর্য বেগম নামে এক নারী জানান, টর্নেডোতে তাঁর ঘরটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ঘরের আসবাবপত্রেরও অনেক ক্ষতি হয়েছেণ। এখন তিনি পরিবার নিয়ে এখন খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মেম্বার হাবিবা বেগম জানান, তাঁর দেবর সোহেল আহমেদ বাড়ি থেকে নাসিরনগর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ঝড়ের সময় কোনোভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ব্রাহ্মণাবাড়িয়া নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেম জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে টর্নেডোর আঘাত হানে। ওই দুই ওয়ার্ডে প্রায় ৫০টির মতো ঘর বিধ্বস্থ হয়েছে। এ ছাড়া গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে গেছে।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী জানান, তিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো ঘুরে দেখেছেন। তাঁর উপজেলায় অন্তত ১০০ এর মতো বাড়িঘর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।