পেটের দায়ে বাপ-দাদার পেশায় পরে আছি

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: রবিবার ২৭শে নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
পেটের দায়ে বাপ-দাদার পেশায় পরে আছি

পেটের দায়ে বাপ-দাদার পেশায় পরে আছি। এ পেশায় থেকে জীবন চালানো দিনে দিনে কঠিন হয়ে পড়ছে। প্লাস্টিকের পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে আছে তাই বাঁশ-বেতের পণ্যের এখন তেমন চাহিদা নেই। সারা দিন পরিশ্রম করে যা তৈরী করি, পাইকারের কাছে তা বিক্রি করে সকল খরচ বাদ দিলে আমাদের থাকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। লাগামহীন দুর্মূল্যের বাজারে এই সামান্য টাকায় খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা দায়। 


রবিবার দুপুরে স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে নিয়ে ঘরের দরজায় বসে ধান রাখার খারি (টুকরী) বানানোর সময় দেবীদ্বার উপজেলার দক্ষিণ পুনরা গ্রামের বাঁশ-বেতের কারিগর খোকন মিয়া(৬৫) এ প্রতিনিধিকে এসব কথা জানান।


অগ্রহায়ন মাসে ধান কাটার ভরা মৌসুমে ওরা, খাড়ি, ডুলির চাহিদা থাকে অনেক। স্বামী-স্ত্রী মিলে তাই দিন-রাত বুনে চলেছেন এসব পণ্য।


একই চিত্র দেখা গেলো দক্ষিণ পুনরার অন্যান্য বাড়িগুলোতেও। পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে থাকা সকলেই জানালেন তাদের সুখ-দুঃখের নানা কথা।


গ্রামের প্রবীণ কারিগর মোবারক হোসেন (৭০) এবং সাহেব আলী (৬০)সহ আরো কয়েকজনকে একসাথে মিলে একটি পরিত্যাক্ত বাড়ির গাছের ছায়ায় দলবেধে বসে বুনছিলেন নানা গৃহস্থালী পণ্য। আলাপ কালে তারা জানালেন প্রায় ২শ বছর যাবৎ বংশ পরম্পরায় তারা সকলে এ পেশায় যুক্ত রয়েছে। আগে দক্ষিণ পুনরার প্রায় সকলেই এ পেশায় যুক্ত থাকলেও কালক্রমে তা মাত্র ৪০-৫০ পরিবারে এসে ঠেকেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকতে না পেরে ইতিমধ্যে অনেকেই পেশা বদলেছেন, অনেকে পাড়ি দিয়েছেন দূর প্রবাসে।


তারা আরো জানালেন শুধু প্লাস্টিকের পণ্যের দৌড়াত্ম নয়, প্রয়োজনীয় বাঁশের সংকট ও উচ্চ মূল্য এবং মাটি কাটার ড্রেজার মেশিনের কারনেও তারা ক্ষতিগ্রস্থ্। আগে মাটি কাটার শ্রমিকদের জন্য টুকরী বানিয়েও তাদের অনেকে জীবন চালাতো। এখন ড্রেজার আর ভেকু (এস্কেভেটর) দিয়ে মাটি কাটার কারনে মাটি কাটার শ্রমিক কমেছে। ফলে টুকরীর চাহিদা প্রায় নাই বললেই চলে।


কথা হয় কাতার প্রবাসী মোঃ মাসুমের সাথে। তিনি জানান দেশে থাকতে দীর্ঘদিন এ পেশায় যুক্ত ছিলেন। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে শেষে যে টাকা আয় হয় তাতে জীবিকা নির্বাহ অনেক কঠিন ছিলো তাই বাধ্য হয়ে স্বদেশ-স্বজন ফেলে দূর প্রবাসে পাড়ি জমান। বর্তমানে দুই মাসের ছুটিতে দেশে আছেন।


এইচএসসি পাশ আব্দুল কাদের বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও ভাল দক্ষতা থাকলে এক দিনে ১০টা ছোট সাইজের মাছের টুকরী বানানো সম্ভব। যার পাইকারী বাজারমূল্য ৪৫০ টাকা। অথচ ১০ টুকরির জন্য ২০০ টাকার একটা বাঁশ, ৩০ টাকার প্লাস্টিকের বেত, প্রতিটা টুকরি ২ টাকা করে ১০টা টুকরির মুরি বান্ধা ২০ টাকাসহ আনুসাঙ্গিক অন্যান্য খরচ বাদেও মোট ২৫০ টাকা খরচ হয়। এই হিসেবে একজন দক্ষ শ্রমিক দিন শেষে পায় মাত্র ২০০ টকা। তাও বর্ষাকালে কাজকর্ম একদম থাকেই না। তখন সংসারের খাবার জোটানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তার পরও একদম বেকার না থেকে অনেকে এ পেশায় লেগে আছেন। সুযোগ পেলে পেশা বদল করে নিচ্ছেন অনেকেই। ফলে বেত শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে।