চুনারুঘাটে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক
আমিনুল ইসলাম আপন - জেলা প্রতিনিধি,হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:১৬ অপরাহ্ন
চুনারুঘাটে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার হিড়িক

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে সামাজিক বনায়নের গাছ অবাধে কেটে পাচার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সংরক্ষিত বনের গাছ চুরিও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বন বিভাগ চোরদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না, ফলে প্রতিনিয়ত মূল্যবান গাছ লোপাট হচ্ছে। এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচশ সিএফটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  


স্থানীয়দের অভিযোগ, ছনবাড়ি বিটের গাতাবাড়ি এলাকায় সংঘবদ্ধ গাছ চোররা রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের সঙ্গে ২০১৫-১৬ সালে দরিদ্র ৩০ জন ব্যক্তি মিলে ৩০ হাজার চারা রোপণ করেছিলেন, যা এখন চোরদের নজরে পড়েছে। চুনারুঘাটের বিভিন্ন সড়কের পাশে সৃজিত লক্ষাধিক সিএফটি গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে।  


রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই চক্র বছরের পর বছর গাছ পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এক সময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় গাছ চোররা ছিল, এখন তারা সমন্বয়ক পরিচয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।  


বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি চুনারুঘাট সফরে এসে গাছ চুরি বন্ধে কঠোর নির্দেশ দিলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি চান্দপুর চা বাগান এলাকা থেকে ১৩টি গাছ কেটে নিয়েছে চক্রটি। সংরক্ষিত বন থেকেও একইভাবে গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে।  


চুনারুঘাটের ৪০টিরও বেশি স’ মিলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী গাছ পাচার সিন্ডিকেট। এসব স’ মিলের মালিকদের অনেকেই রাজনৈতিক দলের নেতা বলে জানা গেছে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, বেশিরভাগ স’ মিলের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও উচ্চ আদালতে রিট করে তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।  


স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি স’ মিলের সামনে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান গাছ স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। বন বিভাগ অভিযান চালালেও গাছ চোরদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এতে করে সংরক্ষিত বন হুমকির মুখে পড়েছে।  


চুনারুঘাটে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান জানান, গাছ পাচার রোধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত মাসে ৮৪ ঘনফুট অবৈধ গাছ উদ্ধার করে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। তবে চক্রটি এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের থামানো কঠিন হয়ে পড়ছে।  


স্থানীয়রা বন ধ্বংস রোধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া গাছ পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়।