স্ত্রীরা স্বামীদের মতো আয় করতে পারে না: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ১৩ই অক্টোবর ২০২১ ০২:৫৫ অপরাহ্ন
স্ত্রীরা স্বামীদের মতো আয় করতে পারে না: গবেষণা

আপনি আপনার স্বামীর মতো আয় করতে পারেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে—না।  ভারতে হওয়া একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, স্ত্রীরা তাঁদের স্বামীদের মতো আয় করতে পারেন না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের গবেষক অধ্যাপক হেমা স্বামীনাথন ও অধ্যাপক দীপক মালগান ৪৫টি দেশের ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য বের করেছেন। ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে লুক্সেমবার্গের অলাভজনক সংস্থা দ্য লুক্সেমবার্গ ইনকাম স্টাডি। 


এ বিষয়ে অধ্যাপক হেমা স্বামীনাথন বলেন, `সাধারণ ধারণা হলো যে একটি পরিবারের উপার্জন সমানভাবে বণ্টন করা হয়। কিন্তু পরিবার প্রায়ই বড় অসমতার একটি জায়গা এবং আমরা এটি উন্মুক্ত করতে চেয়েছি।'অধ্যাপক দীপক মালগান বলেন, সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উন্নত দেশ হোক আর দরিদ্র দেশ হোক, যেখানে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই কাজ করেন এমন ক্ষেত্রে স্ত্রীরা তাঁদের স্বামীদের চেয়ে বেশি আয় করতে পারেন না।  নর্ডিক দেশগুলোর ক্ষেত্রেও অবস্থা এমনই, যদিও বিশ্বের এই অঞ্চলে লিঙ্গবৈষম্য খুবই কম।  


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংস্কৃতিকভাবে পুরুষদের উপার্জনকারী হিসেবে দেখা হয়। আর নারীদের গৃহিণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক নারী সন্তান প্রসবের পর বাইরে কাজ করা বন্ধ করে দেন । এ ছাড়া নারী ও পুরুষের মধ্যে মজুরিবৈষম্যও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এখনো রয়েছে। এ ছাড়া নারীরা ঘরের কাজ কোনো মজুরি ছাড়াই করে যাচ্ছেন।


২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীরা মোট কাজের ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ ঘণ্টাই করে মজুরি ছাড়া। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে এই হার বেড়ে প্রায় ৮০ শতাংশে দাঁড়ায়। এটি পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।  ওই প্রতিবেদনে বলা হয় যে অবৈতনিক কাজ নারীদের শ্রমশক্তিতে প্রবেশ, অগ্রগতি রোধে প্রধান বাধা। 


গবেষকেরা বলছেন, একজন নারীর কম আয়ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।  ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক হেমা স্বামীনাথন বলেন, গৃহিণীর কাজের মাধ্যমে নারী একটি পরিবারে যে অবদান রাখছেন, সেটি দেখা যায় না তবে নগদ অর্থ দেখা যায়।  যখন একজন স্ত্রী বেতন আনেন এবং তা পরিবারে খরচ করেন, তখন এটি তার শক্তি বাড়ায় ও পরিবারে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ করে দেয়।  তবে গবেষণায় বলা হয়েছে, আয় সমান না করতে পারলেও ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বৈষম্য ২০ শতাংশ  হ্রাস পেয়েছে। 


হেমা স্বামীনাথন বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ঘটেছে এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় আরও নারীবান্ধব নীতি স্বামীদের আয়ের সঙ্গে ব্যবধানকে সংকুচিত করেছে। সমান কাজের জন্য সমান বেতনের জন্য আন্দোলন হয়েছে। এ সবই ব্যবধান কমাচ্ছে। তবে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবধান রয়েছে, যা অবশ্যই কমাতে হবে। হেমা স্বামীনাথনের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। কোম্পানিগুলো যথেষ্ট পরিমাণে নারীদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে না। 


ভারতের এই বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন করেন, নারীদের কাজের কী স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে? তাঁদের জন্য যে নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেটি কি তাঁদের পরিবার ও শিশুবান্ধব? এর জন্য পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে, যাঁরা নারীদের সঙ্গে অবৈতনিক কাজের বোঝা ভাগ করে নেবেন। এ ছাড়া সরকার এবং সমাজেরও করার অনেক কিছু আছে। এভাবে চলতে পারে না।