ইউটিউবকে ১ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০১ অপরাহ্ন
ইউটিউবকে ১ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা জরিমানা

শিশু নীতিমালা অমান্য করায় ইউটিউবকে ১৭ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকারও বেশি। এ রায়ে শিশুদের জন্য নির্মিত ভিডিওতে বিজ্ঞাপন সীমিত করতেও বলা হয়েছে। ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সঙ্গে মীমাংসায় জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে ইউটিউবের মালিক প্রতিষ্ঠান গুগল। ইউএস ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) জানায়, ১৩ বছরের নিচের শিশুদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার সম্মতি নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও-শেয়ারিং সাইটটি।

এফটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ডেটা ব্যবহার করে শিশুদেরকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছিলো, যা ১৯৯৮ চিলড্রেন’স অনলাইন প্রাইভেসি প্রোটেকশন অ্যাক্ট (সিওপিপিএ) অমান্য করছে। এফটিসি চেয়ারম্যান জো সিমন্স বলেন, এই আইন অমান্য করায় ইউটিউবের কোনো অজুহাত নেই। তিনি আরো জানান, সিওপিপিএ’র অধীনে দেওয়া আগের বৃহত্তম জরিমানার চেয়েও ত্রিশ গুণ বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে গুগলকে। এই গুরুত্বপূর্ণ রায়টি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, কনটেন্ট প্রোভাইডার ও জন সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।  এফটিসিকে গুগল জরিমানা দেবে ১৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা সিওপিপিএ মামলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাকি ৩.৪ কোটি ডলার দিতে হবে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যকে।

এফটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, “শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ৬ থেকে ১১ বছরের শিশুদের নাগালে পৌঁছাতে ইউটিউব এখন সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে।” ইউটিউব কিডস নামের ভিন্ন একটি অ্যাপে নিয়মিতভাবে কনটেন্ট পর্যালোচনাও করে প্রতিষ্ঠানটি। এফটিসির পাঁচ কমিশনারের মধ্যে একজন রোহিত চোপড়া জানান, তার মনে হয় মামলা মীমাংসা যথেষ্ট হয়নি। ইউটিউবে শিশুদের ছড়া এবং কার্টুনের ভিডিও দিয়ে “টোপ” ফেলেছে গুগল। টুইটারের চোপড়া আরও বলেন, যে জরিমানা করা হয়েছে তা “খুব সামান্য প্রভাব ফেলবে” এবং ইউটিউবে যে পরিবর্তনগুলো আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা “যথেষ্ট নয়”। মামলা মীমাংসার অংশ হিসেবে গুগলকে একটি ভিন্ন ব্যবস্থা বানাতে হবে, যাতে শিশুদের জন্য কনটেন্টগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা থাকবে।

এদিকে ইউটিউব জানিয়েছে, বাচ্চাদের উপযোগী ভিডিও চিহ্নিত করতে মেশিন লার্নিং ও ভিডিও নির্মাতারা কাজ করছেন। অ্যালগরিদমের মাধ্যমে তারা এগুলো চিহ্নিত করেন, যদিও এই ধরনের কনটেন্ট চিহ্নিত করা খানিকটা জটিল। তবে নির্মাতাদের নতুন নিয়মের সঙ্গে সমন্বয় করতে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য বুদ্ধিদীপ্ত ও মৌলিক কনটেন্ট তৈরিতে জোর দেবে বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এই খাতে ১০ কোটি ডলার তহবিলের ঘোষণা দেয় তারা। এক ব্লগ পোস্টে ইউটিউব প্রধান সুজান ওজসিকি বলেন, “স্পষ্টভাবে শিশুদের জন্য বানানো কনটেন্ট” স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত ও লেবেল করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটটি। শিশুদের চরিত্র, খেলনা এবং গেইমের মতো বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হবে।

বাবা-মায়ের সম্মতিতেই শিশুরা যাতে ভিডিও দেখে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইউটিউব পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। শিশুদের ভিডিও থেকে নেওয়া ডেটা দিয়ে বিজ্ঞাপন টার্গেট করা বন্ধ করা হবে। অবশ্য শুধু গুগলই নয়, বর্তমানে আরও বড় কিছু প্ল্যাটফর্ম চাপের মধ্যে রয়েছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছে এফটিসি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে শিশুদের গেম কিনতে উদ্বুদ্ধ করছে- এমনটা বলা হয়। এর আগে ২০১৪ সালে অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই শিশুদের মোবাইল গেম খেলতে দেওয়ায় গুগল ও অ্যাপলকে অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব