৩০ বছর বনবাসে ছিলেন তিনি!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০৯ অপরাহ্ন
৩০ বছর বনবাসে ছিলেন তিনি!

অনেক মানুষ আছেন যারা একা থাকতে পছন্দ করেন না। আবার কিছু মানুষের কাছে এই নিঃসঙ্গতাই হল আনন্দের উৎস। কিন্তু সিঙ্গাপুরের ওহ গো সেঙ্গ নামের ৭৯ বছর বয়সি এক ব্যক্তি বনবাসের গল্প পুরোই আলাদা। ৩০ বছর বনবাসে ছিলেন তিনি।


চলতি মাসের শুরুর দিকেই তার বন্য জীবনের গল্প গণমাধ্যমে উঠে আসে। অনেকেরই জিজ্ঞাসা কীভাবে তিনি লোকোচক্ষুর আড়ালে ৩০ বছর পার করলেন? 


আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ওহ গো সেঙ্গ বড় হয়েছিলেন তার পরিবারের সাথে সিঙ্গাপুরের সুনগেই তেনহা নামক গ্রামে। ১৯৮০ সালের দিকে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। পরে সরকারি ভবনেই বাসিন্দারা ঘর পেয়েছিল। কিন্তু ওহ গো ঘর পাননি। যদিও তার ভাই সরকারি একটি ফ্লাট পেয়েছিলেন। এবং সেখানেই তাকে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ওহ গো সেখানে ওঠেননি। জানিয়েছিলেন তার ভার পরিবারকে বহন করতে দিতে চান না তিনি।



এরপরই তিনি পুরোনো বাড়ির কাছে একটি বনের মধ্যে চলে যান। আর সেখানেই কাঠখড় দিয়ে বানিয়ে নেন মাথা গোঁজার ঠাই। খোলা আকাশের নিচেই চলতো তার রান্না-বান্না। খুপরি ঘরের কাছেই করেন বাগান। সেখানেই ফলান নানান রকম ফুল, ফল আর সবজি।


বন্য জীবনে কতটা অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল তাকে, এই প্রশ্নের উত্তের তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে অসুবিধার কারণ ছিল ইঁদুর। এগুলো আমার ঘরে ঢুকতো। এবং ঘর ও কাপড়-চোপড় খেয়ে টুকরো করে ফেলতো।’’


ওহ গো অনেক সময় জীবিকার জন্য প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার বাতামে যেতেন। সেখানেও সবজি বিক্রি করতেন। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয়েছিল ম্যাডাম তাচিহ নামে এক নারীর সাথে। এক সময় তাকেই বিয়ে করেন ওহ। তাচিহ ও ওহর ১৭ বছর বয়সী একটি মেয়েও আছে।


সিঙ্গাপুরে ঘর নেই এমন মানুষ খুব কমই আছেন। ওহ গোর ঘটনা সামনে আসার পর চলতি মাসেই তাকে একটি ঘর উপহার দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এই ফ্লাটে তাকে টেলিভিশন, ফার্নিচারসহ নানা রকম জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছেন অনেকে। ওহ জানান, ত্রিশ বছর পর প্রথম তিনি টিভি দেখেছেন।


তিনি জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে তার স্ত্রী ও কন্যাকে সাহায্যের জন্যও এগিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে।


শুধু ঘর নয়, নতুন চাকরিও পেয়েছেন ওহ গো সেঙ্গ। বিদেশী শ্রমিকদের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সেই সাথে করছেন বাগানও। প্রথমবারের মতো এবারই তিনি পরিবারের সাথে চন্দ্র বর্ষ ( লুনার নিউ ইয়ার) উদযাপন করেন।


নতুন করে নগর জীবনকে উপভোগই করছেন তিনি। নতুন বছর উদযাপন করে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি অনেক খেয়েছি। এখানে নানা রকম খাবার ছিল, যা অনেক বছর খাইনি। ত্রিশ বছরের মধ্যে প্রথম টেলিভিশন দেখিছি।’’


তবে ওহ এখনও সেই বন্য স্বাধীনতা অনুভব করেন। বলেন, ‘‘অনেক বছর ওখানে থেকেছি আমি। স্বাভাবিক ভাবেই মায়া পড়ে গেছে।’’


তিনি আরও বলেন, ‘‘এখনও আমি প্রতিদিন বনে যাই। কাজ শুরু হওয়ার আগেই রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠি। পোশাক পরি। তারপর বনের মধ্যে আমার বাগানটা দেখে আসি।’’


সূত্র: বিবিসি