ফের উত্তপ্ত হংকংয়ের রাজপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ৭ই অক্টোবর ২০১৯ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
ফের উত্তপ্ত হংকংয়ের রাজপথ

দাঙ্গা, সরকারি অফিসে হামলা, চীনের সঙ্গে যোগাযোগের সড়ক ও রেলপথ বন্ধের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে হংকংয়ের রাজপথ। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে পুলিশ টিয়ার শেল, জলকামান ও লাঠিচার্জ করেছে। মূলত দেশটির নেতা ক্যারি লাম গত শুক্রবার বিক্ষোভ-সমাবেশে মুখোশ পরা নিষিদ্ধ ঘোষণার পরই নতুন বিক্ষোভের শুরু হয়। তবে গতকাল রবিবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও ঔপনিবেশিক যুগের জরুরি আইনের আওতায় জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখলে বিক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে।

চার মাসের টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি লাম বলেন, বিক্ষোভ-সমাবেশে মুখোশ পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। শনিবার থেকেই তা কার্যকর হবে। পরিস্থিতি যাতে খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে না যায় সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন আইনের আওতায় মুখে ব্যবহার করা যায়Ñ এমন সব আবরণই নিষিদ্ধ থাকবে। এমনকি মুখে পেইন্টও লাগানো যাবে না। লামের সেই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বিক্ষোভকারীরা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন এ আইন অমান্য করার দৃঢ়সঙ্কল্প নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ করেছে। মুখোশ পরা বিক্ষোভকারীরা অবশ্য এর আগে সরকারের মুখোশ নিষিদ্ধের তোড়জোড় শুরুর সময়ই এর বিরোধিতা করতে অন্যান্য আন্দোলনকর্মীদের মুখোশ পরার আহ্বান জানিয়েছিল।

হংকংয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে এবং তাদের যেন শনাক্ত করা না যায়, এজন্য প্রায়ই মুখোশ পরে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন আইনটি খুবই বিতর্কিত এবং এটি কার্যকর করাও কঠিন হবে। তা ছাড়া, হংকংয়ে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে এটিই সম্ভবত প্রথম এমন কড়া পদক্ষেপ বলে সতর্ক করেছেন সমালোচকরাও। সমালোচকদের আশঙ্কা, এতে হংকংয়ে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা বিপদগ্রস্ত হবে। গণতন্ত্রপন্থি এক আইনজীবী বলেছেন, ‘এটি কেবল শুরু। সামনে আইনের নামে আরও অনেক কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আন্দোলনকারীদের কোণঠাসা করা হতে পারে বলে আমি উদ্বিগ্ন।’

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কেবল বিক্ষোভকারীরাই নয় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন মহল থেকেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক র‌্যাব বলেছেন, ‘হংকং পরিস্থিতি কেবল রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে।’ চীনের মূলভ‚খণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে একটি প্রস্তাবিত বিল বাতিলের দাবিতে গত জুন মাসে হংকংয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। টানা আন্দোলনের মুখে ওই বিল প্রথমে ‘মৃত’ এবং পরে বাতিল ঘোষণা করা হলেও আন্দোলন থামেনি। বরং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা এখন হংকংয়ের চীনপন্থি সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।

প্রায় চার মাস ধরে চলা আন্দোলনের সবচেয়ে সংঘাতময় দিনটি ছিল চীনে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় ১৮ বছরের এক তরুণ একটি ধাতব লাঠি হাতে এক পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে তাকে থামাতে পুলিশ সরাসরি তার বুকে গুলি করে। হংকং জুড়ে এদিন ২৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের ১৭৮ জন পুরুষ ও ৯১ জন নারী। বিক্ষোভ শুরুর পর এর আগে একদিনে এত বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়নি।

ইনিউজ ৭১/এম.আর