হিলি ঘোড়াঘাট সড়ক: এলাকাবাসীর দাবি দুর্ভোগ শেষ হবে কবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: রবিবার ৯ই এপ্রিল ২০২৩ ০৫:২৩ অপরাহ্ন
হিলি ঘোড়াঘাট সড়ক: এলাকাবাসীর দাবি দুর্ভোগ শেষ হবে কবে?

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর মোড় পর্যন্ত মোট ২৬ কি: মি: পাকা রাস্তা দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কারের পরেও বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল, রিক্সা ও ভ্যান চালক, স্কুলের শিক্ষার্থী ও যাত্রীসহ সাধারণ পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এলাকাবাসীর এই দুর্ভোগের শেষ হবে কবে। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে শতাধিক ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আবার পণ্য গুলো আনলোড করে দেশীয় ট্রাকে এই বন্দর থেকেও অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে।


হিলি-ঘোড়াঘাট- বগুড়া রুটের যাত্রীবাহী বাহনও চলে এই রাস্তা দিয়েই। কিন্তু হিলি পানামা পোর্ট থেকে ঘোড়াঘাট উপজেলার ওছমানপুর মোড় পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কের ৩৬ টি বড় বড় গর্ত রয়েছে। যেগুলো সড়ক জনপথ বিভাগ থেকে হিয়ারিং ইট বিছিয়ে সংস্কার করা হয়। দীর্ঘ দিন হওয়ায় এখন আরও ভোগান্তি বেশি।গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল দশার কারণে যাত্রী ও পণ্যবাহি যানবাহনসহ বিভিন্ন যানবাহন ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য। দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বলছে, সড়কের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন শুধু ঠিকাদার নিয়োগ হলেই কাজ শুরু করা হবে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়াও যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে ওই সড়ক দিয়ে। রাস্তায় শুধু ইট বিছানো আছে অনেক দিন ধরেই। অনেক জায়গায় ইটও উঠে গেছে। যেকোনো সময় গাড়ি উল্টে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।  


হিলি বন্দরের আমদানিকারক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ পৃর্বের উপজেলা ঘোড়াঘাট আর সর্ব দক্ষিণের উপজেলা হাকিমপুর (হিলি)। জেলা সদর থেকে হিলির দূরত্ব ৭০ ও ঘোড়াঘাটের ১০০ কিলোমিটার। এই হিলি বন্দর থেকে ঘোড়াঘাট হয়ে বগুড়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের সহজ সড়ক এটি। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ২৬ কিলোমিটার সড়কে ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের সৃষ্টি হয়েছে। 


ট্রাকচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি গত বছর এই সড়কটি দিয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাক অনেক ঝুঁকি নিয়ে বগুড়া ঢাকা, চট্রগ্রাম গেছি। কিন্তু বর্তমানেও সড়কটির বেহাল দশা। তাই আর এই সড়ক তেমন ব্যবহার করি না। হিলি বন্দরের পানামা পোর্ট গেট থেকে ঘোড়াঘাটের ওছমানপুর পর্যন্ত এই ২৬ কিলোমিটার সড়ক দিয়ে আর পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে যাওয়া যায় না। গত বর্ষা মৌসুমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোতে ইট দিয়ে উঁচু করে হেয়ারিং বন্ড (এইচবিবিকরণ) করায় পণ্যবাহী ট্রাক উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে খালি ট্রাক এই সড়ক দিয়ে বন্দরে প্রবেশ করলেও পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে যেতে পারেন না চালকেরা।


পিকআপ চালক আজিম উদ্দিন বলেন, হিলি থেকে ঘোড়াঘাটের ওছমানপুর পর্যন্ত এই সড়কের মাঝে সৃষ্টি হওয়া গতগুলোতে এতই উঁচু করে হেয়ারিং বন্ড করা হয়েছে। তাতে অনেক সময় পিকআপ ও মাইক্রোর নিচের অংশ আটকে যায়। তখন পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি পার করা ছাড়া উপায় থাকে না।


অটোবাইক চালক আব্দুর রশিদ বলেন, এই সড়কের যাত্রীরা অটোতে আসতে চায় না ঝাকুনির কারণে। সকড়ের পুরো অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে কয়েক বছর আগেই। ইটের জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হলেও সেগুলো ভেঙে গেছে। অটোবাইকের হ্যান্ডেল ধরে থাকা যায় না।


মোটরসাইকেল চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষককতা পেশায় জড়িত আছি। আমাকে প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে ১৫-১৬ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আমার দূর্ভোগের শেষ নাই। গর্তগুলোতে ইট বিছিয়ে দেওয়ায় দীর্ঘ দিন হওয়ায় ইট খয়ে গেছে ফলে এখন আরও ভয় বেশি লাগে। জানি না কখন দূর্ঘটনা ঘটে।  

উপজেলার ছাতনি রাউতারা গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, হিলি থেকে সরকার প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা আয় করলেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই সড়কটির প্রতি। বড় যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি মোটর বাইক, ভ্যান, অটোবাইক চলাচলও করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মাঝে মধ্যে ভ্যান, অটোবাইক উল্টে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। পাকা সড়কের উপর (এইবিবিকরণ) উঁচু করে হেয়ারিং বন্ড করা হয়েছে। তাতে আরও ঝুঁকি বেড়েছে।


হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, আমার ইউনিয়নের হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের ৩ কিলোমিটার অংশ পড়েছে। যা যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী। প্রায় ভ্যান, অটোচালক ও বাইক চালকদের ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।


দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের ( সওজ) উপ-সরকারি প্রকৌশলী আনফ সরকার বলেন, হিলি থেকে ঘোড়াঘাটের ওছমানপুর পর্যন্ত ২৬ কিলোমিমটার সড়কটি ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। ঠিকাদার নিয়োগ হলেই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। আগামী বর্ষার আগে চলাচলের উপযোগী করা চেষ্টা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আর এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা।