কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার অংশে মরণফাঁদ !

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, উপজেলা প্রতিনিধি - দেবীদ্বার, কুমিল্লা
প্রকাশিত: রবিবার ২১শে মে ২০২৩ ১০:৩০ অপরাহ্ন
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার অংশে মরণফাঁদ !

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা সদর এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন ও দেবীদ্বার ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ ‘দেবীদ্বার-চান্দিনা’ সড়কের পাশে পৌর এলাকাধীন পয়নিষ্কাসনের ড্রেনের উপর ফুটপাতে নির্মীত স্ল্যাবগুলো ভেঙ্গে চুড়ে এখন যেনো এক মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে।


স্ল্যাবগুলো ভাঙ্গার কারনে সৃষ্ট গর্তে যান ও মাল পরিবহন এবং সাধারন জনগন প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে চলাচল করতে হচ্ছে । এসব স্ল্যাবগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন যান ও মাল পরিবহন থুবড়ে পরে আটকে থেকে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং পথচারিরা দূর্ঘটনার আঘাত প্রাপ্ত হয়ে হাসপাতাল ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।


কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা থেকে থানা গেইটের সামনের ড্রেনের উপর প্রায় ২৭টি স্লাব এবং দেবীদ্বার- চান্দিনা সড়কের পাশে ড্রেনের উপর নির্মীত ৪টি স্ল্যাবের বেহাল অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। স্ল্যাপগুলো ভাঙ্গার কারনে ভোগান্তি পোহাচ্ছে যান ও মাল পরিবহনসহ হাজার হাজার পথচারীর।


স্থানীয় একাধিক ভোক্তভোগীরা জানান, বৃষ্টিতে সড়ক ডুবে যাওয়া থেকে সড়ক রক্ষায় এবং পথচারিদের নির্ভিগ্নে চলাচলের সার্থে গত ৩ বছর পূর্বে কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়কের দেবীদ্বার পৌর এলাকার মাটিয়া মসজিদ থেকে থানা গেইট এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৮শত মিটার এলাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে পয়নিষ্কাসনের ড্রেন নির্মাণ এবং ড্রেনের উপর স্ল্যাব দিয়ে পথচারিদের ফুটপাত তৈরী করা হয়।


এগুলোর মধ্যে দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে থানাগেইট এলাকার বেশ কিছু স্ল্যাব খালি থাকায় উক্ত স্ল্যাবের গর্তে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটে। সরকারী স্কুল ও থানার সীমান্তের একটি ভাঙ্গা স্ল্যাবের কূপে পড়ে গত ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর দেবীদ্বার পাঠান বাড়ির মৃত: আকামত আলী পাঠানের ছেলে জাবেদ পাঠান(২২) মারা যান। তার পর পরই পৌরসভার অর্থায়নের রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্ল্যাবগুলো বসানো হয়। স্ল্যাবগুলো টেকসই না হওয়ায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভারি যানবাহনের চাপায় স্ল্যাবগুলো ভেঙ্গে যায়। তাই সড়কের পাশের ফুটপাতের গর্তের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং পথচারিরাও পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।


কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কটির দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকা থেকে থানা গেইট পর্যন্ত প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার সড়কের জায়গা ফুটপাতসহ ২০ ফুট থেকে ৩০ ফুট প্রশস্ত, তার উপর ভারি যানবাহন চলা চল, পৌরসভা থেকে ইজারা দেয়া সিএনজি স্ট্যান্ডগুলো ও নিউমার্কেট দৈনিক বাজার সড়কের উপর, সব মিলিয়ে পথচারীদের চলাচল খুবই ঝুকিপূর্ণ। ড্রেনগুলোও বছরের পর পছর পরিস্কার না করা, বর্ষায় সড়ক এবং ফুটপাত একাকার হয়ে যায়। ফলে গর্ত বা ফুটপাত চেনার উপায় থাকেনা, ফলে পথচারিরা গর্তে পড়ে আহত হচ্ছেন। আবার অনেক সময় গাড়ির চাকায় ছিটকেপড়া ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা এসে গায়ে লাগছে পথচারীদের।


পৌর এলাকার নারী উদ্যোক্তা হুরবানু আক্তার পলি বলেন, সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়েও স্বস্তিতে নেই অভিভাবকরা। প্রায়ই স্লাবভাঙ্গা গর্তে পড়ে ময়লা- আবর্জনা মাখা পড়নের কাপড় নিয়ে, শরীরের ব্যাথা, হাতা-পা’য়ের ক্ষত নিয়ে বিদ্যালয়ে না ঢুকে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।

 

পৌরসভার আরেক বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ এই ড্রেন এবং ড্রেনের উপর ভাঙ্গা স্ল্যাবগুলো একই রকম হাল (অবস্থা)। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসককে অবগত করেছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুমে এই দুর্ভোগ আরো চরমে রূপ নেয়। তবুও কারো নজর নেই এই ভাঙ্গা ড্রেনের উপর। 


সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হাসান সাকিব জানান, আমি কুমিল্লার কর্মস্থলে এসেছি প্রায় দেড় বছর আগে, সমস্যাটি তারও আগের। খুব শীঘ্রই জনদূর্ভোগ নিরসনে দরপত্র আহবানে ঠিকাদার নিয়োগে ব্যবস্থা নেব।


দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নিগার সুলতানা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন এবং ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।