চুরির টাকায় বান্ধবীকে উপহার, ভ্রমণে গিয়ে ধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২রা মে ২০২৪ ০৯:০৬ অপরাহ্ন
চুরির টাকায় বান্ধবীকে উপহার, ভ্রমণে গিয়ে ধরা

চুরি করা স্বর্ণালংকার ও ডলার বিক্রির টাকা দিয়ে চক্রের আটজন বন্ধু মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যায়। সেখানে নানান আনন্দ-ফুর্তির পাশাপাশি মাদক নেশা করে। সংঘবদ্ধ চোর চক্রের এসব সদস্যের পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিঁধেল চোর চক্রের ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে ৬১ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।


আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।


হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঈদের আগে ও পরে ঢাকা মহানগরীতে কয়েকটি সিঁদেল চুরির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর অজ্ঞাতনামা চোরদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে ডিবির প্রতিটি বিভাগ। অভিযানে ৩৬ জন গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।


ডিবি সূত্র জানায়, গত ৮ এপ্রিল ওয়ারী থানায় সিধেঁল চুরির অভিযোগে একটি মামলা হয়। এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ হতে থেকে ৭ এপ্রিল যেকোনো সময় ওয়ারীর অভয়দাস লেনের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফাঁকা বাসার গ্রিল কেটে প্রবেশ করে প্রায় ৩৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩০০ ডলার চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাতনামা চোরেরা। ক্ল-লেস এই চুরির মামলাটি রুজু হওয়ার পর মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিমে হস্তান্তর করা হয়।


ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গুপ্তচরের মাধ্যমে টানা বেশ কয়েকদিন দিন-রাত অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। এরপর বাগেরহাটের মংলা থানার পশুর নদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মো. মোবারক ওরফে মগাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।


এরপর ডিবির ধারাবাহিক অভিযানে নেত্রকোনা জেলা থেকে মো. রাকিব মিয়াকে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রির ৪০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।


এ বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘ঘটনার দিন হেক্সো ব্লেড দিয়ে বাসার বেডরুমের পেছনের গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার ও ডলার চুরি করে। চোরাইকৃত স্বর্ণগুলো মোবারক ও রাকিব বিভিন্ন সময়ে চুরি করে এনে টিকাটুলির হুমায়ুন সাহেবের গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. শেখ ফরিদের কাছে ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ওই স্বর্ণালংকার ও ডলার বিক্রির টাকা দিয়ে মোবারক ও রাকিব তাদের আরো আটজন বন্ধু মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যায় এবং নেশা করে।’


তিনি আরো বলেন, ‘ওই টাকায় মোবারক তার গার্লফ্রেন্ডকে একটি মোবাইল ফোন গিফট করে। এ ছাড়া মো. শেখ ফরিদ স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে চোরাই স্বর্ণ কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত। অভিযুক্ত শেখ ফরিদকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় তার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকারের গলিত ২০ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের পাত উদ্ধার করা হয়। ওই মামলাটি তদন্তকালে আরো দুজন পেশাদার চোর মো. ডালিম ও মো. সাদ্দাম হোসেন বনিকে চুরিতে ব্যবহৃত হেক্সোব্লেড ও ড্রিল মেশিনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি মামলাসহ মাদক মামলা রয়েছে।’


এ ছাড়া ধানমণ্ডির একটি বাসায় গ্রিল কেটে চুরির ঘটনায় গত ১৯ এপ্রিল ধানমণ্ডি মডেল থানায় অপর একটি মামলা হয় জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ওই ঘটনায় চোরেরা ৪১ ভরি ও নগদ ৩৭ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। মামলা তদন্তের সময় গোয়েন্দা রমনা বিভাগের ধানমণ্ডি জোনাল টিম গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। এরপর গত ২৬ এপ্রিল অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহীর নেতৃত্বে ঢাকাসহ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনায় জড়িত মো. গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সময় তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লুণ্ঠিত ৪১ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৭ সাত লক্ষ টাকা ও চুরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।’


এ ছাড়াও, সিঁদেল চোরদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি-মতিঝিল বিভাগ ১৪ জন, ডিবি-লালবাগ বিভাগ ৩ জন, ডিবি-গুলশান বিভাগ ৩ জন ও ডিবি-মিরপুর বিভাগ ২ জন সিঁদেল চোরকে গ্রেপ্তার করে।


অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) বলেন, ‘রাজধানীর যেখানেই চুরির ঘটনা ঘটবে তাত্ক্ষণিক ডিবি পুলিশ সে সকল ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’ যদি এ ধরনের কোনো তথ্য কারো কাছে থাকে তাহলে নিকটবর্তী থানায় মামলা রুজু করে বিষয়টি গোয়েন্দা বিভাগকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি।