শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি জাহাঙ্গীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৩ অপরাহ্ন
শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি জাহাঙ্গীর

দীর্ঘ ৮ বছর পর শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাংতা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তাকে শিকলবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম জানান, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে তিনি শিকলবন্দী জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার অবস্থার কথা জানতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতাকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহযোগিতায় রোববার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর হোসেন তোতাকে শিকলবন্দী থেকে মুক্ত করা হয়। 


জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আশা করা হচ্ছে তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা যাবে। জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে তোতা, বয়স ৫৫ বছর। সে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের মৃত আলতাব হোসেনের বড় ছেলে। 


৮ বছর ধরে শিকলবন্দী হয়ে কাটছিল জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার জীবন। সুস্থ হওয়া সত্বেও তোতাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছিল। শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। 


স্থানীয় কামরুজ্জামান সবুজ বলেন, ছোট একটি টিনের চালার ধানের গোলা ঘরে থাকতেন তোতা যেখানে নেই কোন বিদ্যুৎ, কোন দিন খাবার পেতো কোন দিন না খেয়ে থাকতে হতো তাকে। এভাবেই শিকল পায়ে ৮ বছর থেকে বন্দী জীবন পার করছেন জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা। 


স্থানীয় ফারুক হাওলাদার জানান, তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা তিতুমীর কলেজে পড়াশুনা অবস্থায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে সে। স্থানীয় দুলাল মাতুব্বর জানান, রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছোট ভাই মানিক মিয়া শিক্ষক হলেও আট বছর থেকে বড় ভাইকে দিচ্ছিলনা কোন চিকিৎসা সেবা। নিজে থাকার জন্য পাকা ভবন নির্মাণ করলেও বড় ভাইকে রেখেছিল ধানের গোলা ঘরে। তোতা মিয়া সুস্থ থাকার পরেও রাখা হচ্ছিল শিকলবন্দী। 


জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা জানান, দীর্ঘদিন পরে শিকলবন্দী থেকে মুক্ত হয়ে নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে। কিছুটা শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা পেলে আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারবো। রাংতা ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, একমাত্র বড় ভাইকে কোন রকম সুচিকিৎসা না করিয়ে শিকলবন্দী করেছিল ছোট ভাই। এখন জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা শিকলবন্দী থেকে মুক্তি পাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।


 জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার মা হাওয়া বেগম ও বোন রাশিদা বেগম বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মানসিক সমস্যা নিয়ে অসুস্থ ছিল তোতা। গত ৮ বছর ধরে তোতাকে শিকল দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। 

জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে এটাই আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। 


জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার ছোট ভাই রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিক মিয়া জানান, আমার বড় ভাই মানসিক সমস্যা নিয়ে অসুস্থ ছিল। কিন্তু আমাদের উচিত হয়নি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তাকে শিকলবন্দী করে রাখা। এখন শিকলবন্দী থেকে মুক্ত করা হয়েছে। আমরা দ্রুত দুই একদিনের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। 


উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা জানান, স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম স্যারের নির্দেশে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার বাড়িতে গিয়ে ৮ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্ত করা হয় তোতাকে। তাকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।