বাপু, পেটের দায়ে এই বয়সেও রোজগার করতে হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: শনিবার ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:২৩ অপরাহ্ন
বাপু, পেটের দায়ে এই বয়সেও রোজগার করতে হয়’

"আকপেন হাওয়াই মিটাই,আকপেন হাওয়াই মিটাই" বলে ছোট ঘন্টা বাজিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে চলেছেন। তার পথ যেন ফুরায় না।জীবিকার তাগিদে বৃদ্ধ বয়সে এখনও বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটে বেড়ান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। চেহারায় মলিতার ছাপ, অসুস্থতায় চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।তবুও যেন থেমে নেই তিনি।



হাওয়াই মিঠাই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম এটি। এখনো এটি গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। একসময় ‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু, আধুনিকতার কারণে এটি এখন আর খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তা একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি।



বলছিলাম বেলায়েত হোসেন (৭০) বছর বয়সী এক হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার কথা। ৪০ বছর ধরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চলছে তার।তিন ছেলে আর দুই মেয়ে রয়েছে তার। ছেলেরা বিয়ে করে যার যার মতো আলাদা সংসার পেতেছেন।আর মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন।তবুও যেন দুইজনের সংসারে টানপোড়েন লেগেই থাকে। জমিজমা তেমন নেই।



সারাদিন ভূঞাপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে যা বিক্রি করেন তা থেকে মাত্র ১৫০-২০০ টাকা রোজগার হয়।যা দিয়ে দুইজনের সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।প্রতি প্যাকেট হাওয়াই মিঠাই ১০ টাকায় বিক্রি করেন।এভাবেই এই পেশায় কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ ৪০ বছর। এখন যেন তার ক্লান্তি এসে গেছে।তবুও থেমে থাকার মানুষ নন তিনি। ভোরের সূর্য উঠতে না উঠতেই তাকে ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখা গেল।তার গলার স্বর শুনে শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই এসেছে হাওয়াই মিঠাই কিনতে।



১ম শ্রেণীতে পড়ুয়া নাইম হাসান বলে,এই দাদা আমগোর এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বেঁচতে আহে।তার কাছ থিকা আমরা কিনা খাই।খুব স্বাদ লাগে।



৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া সিফাত মন্ডল জানান, হাওয়াই মিঠাই মুখে দিলেই অন্যরকম স্বাদ লাগে।খেতে দারুন মজা।বৃদ্ধ দাদু প্রায় প্রায়ই আমাদের এলাকায় বিক্রি করতে আসেন।


বেলায়েত সম্পর্কে মসিরন বেওয়া বলেন, চাচা অনেক দিন ধরে আমাদের এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে। বয়সে অনেক বৃদ্ধ তবুও যেন তার ক্লান্তি নেই।গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে।


একান্ত আলাপচারিতায় বেলায়েত বলেন, বাপু, পেটের দায়ে এই বয়সেও রোজগার করতে হয়।কামাই করে খাই।সেই ৪০ বছর ধইরা হাওয়াই মিঠাই বেঁচি।এখন শরীরে পারে না, তবুও করতে হয়।চিনির দাম বেশি হওয়ায় এখন লাভও কম হয়।যে কয়েকটা দিন বাঁচমু এই পেশায় থাকমু।যা কামাই হয় কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করি। আমগোর আর ভাগ্যের পরিবর্তন হবো নাগো বাপু। সারাজীবন কষ্ট করছি, বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট করেই দিনাতিপাত করতে হবে।



ক্যাপশনঃ ছবিটি ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছেন বেলায়েত।