বরিশালে সংস্কৃতি শিল্পীদের পেশা বদল

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২১ ১০:১৭ অপরাহ্ন
বরিশালে সংস্কৃতি শিল্পীদের পেশা বদল

একদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা, অপরদিকে ডিজিটালের প্রভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে বরিশালের সংস্কৃতি শিল্পীরা। বিশেষ করে শিল্প সংস্কৃতি দিয়েই যাদের সংসার চলে তারা দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। কেননা করোনার প্রভাবে তাদের আয়ের পথ অবরুদ্ধ। অপরদিকে ডিজিটালে গা ভাসিয়ে উঠতী বয়সি তরুন-তরুনীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন পেশাদার শিল্পীরা। আর পেটের তাগিদে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অপরদিকে করোনার সংকটকালে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন তাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য বলে দাবী করেন সাংস্কৃতিক সংগঠকরা। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান তারা।


সূত্রে জানা গেছে, নাট্যশিল্পী, যাত্রা শিল্পী, বাউল শিল্পীসহ ৮শ’ থেকে ৯শ’ শিল্পী রয়েছে বরিশালে। করোনার কারণে এ অঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই বললেই চলে। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জে ছোট-খাটো অনুষ্ঠানও বন্ধ। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুরু থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে পালাগান, বাউল গান প্রদর্শনী হলেও করোনার কারণে কোথাও তেমন কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এতে করে কর্মহীন পড়ছেন শিল্পীরা। বিশেষ করে বাউল শিল্পী ও যাত্রা শিল্পীরা রয়েছেন খুবই কষ্টে। তাদের অনেকেই পেটের তাগিদে এখন রিক্সা চালাচ্ছেন, কেউবা ভ্রাম্যমান ফল বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, কেউ আবার রাজমিস্ত্রীর সহযোগি, ভাড়ায় মটর সাইকেল চালানো, কেউবা আবার পথে-ঘাটে আচার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 


কথা হয় বরিশাল বিভাগীয় বাউল শিল্পী সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মোঃ জামান দেওয়ানের সাথে। যিনি এখন রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এ পেশায় নিয়মিত না হওয়ায় প্রতিদিন রিক্সা চালাতে পারেন না তিনি। তবুও সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে এ পেশায় আসছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, বরিশালে ৩৯২জন বাউল শিল্পী রয়েছেন। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা আর্থিক সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমীতে আবেদন করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বরিশালে সরকার বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শুধু জামান দেওয়ানই নয়, তার মতো অনেকেই পেশা বদল করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 


বরিশাল শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের সভাপতি সৈয়দ দুলাল বলেন, করোনার প্রভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকা- নেই বললেই চলে। ফলে বরিশালের শিল্পীরা দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। তিনি আরো বলেন, বরিশালের শিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা প্রশাসন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মোটামুটি সহযোগিতা করেছে। এছাড়া বরিশালের স্বচ্ছল শিল্পীদের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৩শ’ অসচ্ছল শিল্পীদের সহযোগিতা করা হয়েছে। 


বরিশাল নাটক এর সভাপতি এবং বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, করোনার প্রভাবে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকা- না থাকায় বরিশালের সংস্কৃতি শিল্পীরা দুর্বীসহ জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে যাত্রা শিল্পী ও বাউল শিল্পী, তবলচি, ঢাক বাদক অর্থাৎ শিল্প সংস্কৃতি দিয়ে যাদের সংসার চলে তারা খুবই কষ্টে আছেন। এছাড়া যে সকল শিল্পী টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের আয়ের পথ এখন অবরুদ্ধ। বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে সেই সকল শিল্পীদের সহযোগিতা করা হয়েছে তবে তা অপ্রতুল বলেন তিনি। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি শিল্পকলা একাডেমী এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ সরকারের প্রতি আহবান জানান।


উল্লেখ্য বরিশালে করোনার প্রভাবে কমহীন হয়ে পড়া শিল্পীদের বিশেষ করে অসচ্ছল ৫০ জন সংস্কৃতিসেবীর মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন দুই লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলার ২৩টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাঝে ৭ লক্ষ ও ১২১ জন অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবীদের মাঝে মাসিক কল্যাণের ১৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬০০ টাকাসহ মোট ১৯৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ২৮ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে।