এক মাস সিয়াম সাধনা এবং আত্মশুদ্ধির ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পর মুসলমানদের সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে দেশজুড়ে। তবে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হওয়ায় সেই আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। দেশের অধিকাংশ এলাকায়ই ঈদ জামাতের সময় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে মসজিদেই পড়তে হয়েছে ঈদের নামাজ। তবে রাজধানী ঢাকায় প্রধান জামাতগুলো শেষ হওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হয়।
ঈদের দিন বেশিরভাগ মানুষ নতুন পোশাক পড়েছেন। সাধ্য অনুযায়ী ঘরে ঘরে খাবার রান্না হয়েছে। ছোটরা ঈদ সালামির জন্য বড়দের কাছে যাচ্ছে। আর গ্রামে গ্রামে বসেছে মেলা। সেই মেলায় মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীসহ নানা ধরনের খেলনা, বাঁশি, ঘর সাজানোর সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন বিক্রি হচ্ছে। শিশুতের হাতে হাতে রঙিন বেলুন। নাগরদোলায় দুলে কেউ কেউ আনন্দ উপভোগ করছে।
ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গেছেন অসংখ্য মানুষ। তাই ঢাকার রাস্তাঘাট এখন ফাঁকা। ফাঁকা ঢাকায় বইছে নির্মল বাতাস।
সকাল সাড়ে ৯টা বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এবারও সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাষ্ট্রপতি পরিবারের সদস্য ও বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়।
এরপর রাষ্ট্রপতি নামাজ শেষে দেশবাসীর উদ্দেশে ঈদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। করোনাভাইরাসের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মো. আবদুল হামিদ তাই চলাফেরা ও জীবনযাপনে সাবধানতা অবলম্বন না করলে যেকোনো সময় করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে। আনন্দ করতে গিয়ে যেন আমরা বিপদ ডেকে না আনি। তাই আসুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উৎসব পালন করি, দেশকে করোনামুক্ত রাখি।
তিনি বলেন, আজ খুশির দিন, পবিত্র ঈদুল ফিতর। আমি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। শুধু নিজেকে বা পরিবারকে নিয়ে নয় বরং আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে উদযাপনের মধ্যেই ঈদের প্রকৃত আনন্দ। আমি দেশবাসীকে ধনি-দরিদ্র নির্বিশেষে ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে উপভোগের আহ্বান জানাচ্ছি।
বৃষ্টির পর ভিড় রাজধানীর দর্শনীয় স্থানগুলোতে:
মেঘ কেটে যাওয়ার পর পর নতুন পোশাক পরে রাস্তায় রেব হতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। কেউ যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে। কেউবা আবার হাতিরঝিল, ঢাকা চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে।
দুই বছর পর জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত:
দীর্ঘ দুই বছর করোনা মহামারির কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা এবং করোনা মহামারি থেকে মানবজাতির মুক্তিতে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাত শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করা হয়।
আগের দুই বছর করোনা মহামারির কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ঈদের জামাতে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি অংশ নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঈদ উপহার:
অন্যান্য উৎসবের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী তার ঈদ শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরস্থ গজনবী রোডে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) বসবাসরত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফলমূল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার সকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এসব উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেন।
বৃষ্টিতে ভিজে শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়:
দেশের অন্যতম বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এবার ১৯৫তম ঈদ জামাতে ইমামতি করেন শহরের হয়বতনগর মসজিদের ইমাম শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। সকাল ৯টায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ঈদের জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। এর আগেই ভোর থেকে দলে দলে মুসল্লিরা আসতে থাকেন ঈদগাহে। ১০টার আগেই বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।