সমন্বিত চেষ্টায় বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ২৮শে মে ২০২৩ ০৫:০৪ অপরাহ্ন
সমন্বিত চেষ্টায় বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটাররা যেন তাদের ভোটাধিকার সততা, নিষ্ঠা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে উদ্বুদ্ধ করুন। আমাদের ও আইন শঙ্খলা বাহিনীর এক চেষ্টায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের এবং আপনাদের সমন্বিত চেষ্টায় বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 


শনিবার রাতে রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ের আয়োজনে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। ওই সভায় ইভিএম-এ ভোট গ্রহণের প্রতি অনাস্থার কথা বলেন একাধিক মেয়র প্রার্থী। তবে নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা ইভিএম-এ স্বচ্ছ ও সঠিক ভোট হওয়ার বিষয়ে প্রার্থীদের আশ^স্ত করেন তিনি। এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও পেশিশক্তির ব্যবহার কঠোরভাবে দমন করার কথাও বলেন।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এখন ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো অবকাশ নেই, কারণ আমরা তফসিল ঘোষণা করেছি। তফসিল ঘোষণার সময় আপনারা যদি ইভিএম-এ নির্বাচন করবেন না এই বলে নির্বাচন বর্জন করতেন তাহলে একটি কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন আর কয়েকদিন পরে এখন যদি আপনারা বলেনও তাহলে ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালট সংযুক্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি আপনারা মনে করেন, আমরা খুব অসাধু দুর্নীতি পরায়ণ, ইভিএম দিয়ে আমরা কারচুপি করব, তাহলে কথাটা ঠিক না। তিনি বলেন, আমাদের ইভিএম সম্পূর্ণ আইসোলেটেড, আর এটা পৃথিবীর আর কোথায় হয়নি-যে আপনাকে আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ব্যালট ওপেন করতে হবে। আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট যদি ম্যাচ না করে তাহলে ডিজিটাল ব্যালট ওপেন হবে না, আর ম্যাচ করলে অটোমেটিকালি আপনার ডিজিটাল ব্যালটটি ওপেন হয়ে যাবে।


প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের করা প্রশ্নের উত্তরে ইভিএম মেশিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ইভিএমে চেক করে দেখার জন্য আহ্বান সবার জন্য ছিল। আপনারা এখনও আসতে পারেন ইভিএম যেভাবে খুশি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। পরে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমরা ইভিএম-এ ছয় শতাধিক ভোট করেছি, কোনো একজন কোনোদিন কিছু বলেননি। যখন হয়ে যাবে তখন আপনারাও বলবেন ইভিএম কি ছিল। সময় আসবে আপনারা ব্যালট চাইবেন না, আপনারা যারা সৎ, স্বচ্ছ ও সঠিক জিনিসটা চান তারা ইভিএমই চাইবেন। ইভিএম স্বচ্ছতার বিষয়ে শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে গেলাম।


এরআগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস তার প্রশ্নে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি সিটি নির্বাচন যেন ব্যালটে হয়, ইভিএম-এর ভেতরে কি আছে সেটা দেখতে না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে অনীহা হয়েছে। আর আমরা তো এখনও ব্যালটে অভ্যস্ত, তাই সেটাতে নির্বাচন করা যায় কিনা সেটা বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া তিনি এবারের সিটি নির্বাচন ২০১৮ সালের মতো হবে না, সেই নিশ্চয়তা চাওয়ার পাশাপাশি বরিশালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির নিশ্চয়তা চান। সেইসঙ্গে সিইসির কাছে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একচোখা আচরণের অভিযোগ তুলে ইতোপূর্বে দেওয়া অভিযোগের কোনো উত্তর না পাওয়ার কথাও বলেন। পাশাপাশি সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলের মহড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ইতোপূর্বে আমরা ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন করেছি, যদি ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন না দিতেই পারেন, তাহলে ইভিএম-এর গেজেট কি হচ্ছে, সেটা প্রকাশ করতে হবে। এ সময় তিনি ইভিএম সার্কিটের ডিজাইন চাওয়াসহ ১০টি দাবির কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি প্রতি কেন্দ্রে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক প্রতি কেন্দ্র থেকে ছাপানো ফলাফল প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানান হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী।


তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বরিশাল সিটি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। 


বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশনার (অব.) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম, র‌্যাব-৮ বরিশালের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহামুদুল হাসান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরসহ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।