অবশেষে ডিজিটাল হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২রা এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০০ অপরাহ্ন
অবশেষে ডিজিটাল হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা

ভূমি সংক্রান্ত হয়রানি দূর করতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে আগামী জুন মাস থেকে  ডিজিটালাইজড সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ভূমি অধিদফতর। শুধু তাই নয় ফলে নামজারির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে না, মাত্র ২৮ দিনেই নামজারি সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে রাজধানীসহ ঢাকা জেলার প্রায় চার লাখ ই-নামজারি কেস সম্পন্ন হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে ১০ এপ্রিল থেকে ভূমি সেবা সপ্তাহ ও ভূমি করমেলা অনুষ্ঠিত হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ভূমি সংক্রান্ত হয়রানি দূর করতে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রাজধানীসহ ঢাকা জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ই-নামজারি চালু করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৩ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি ই-নামজারি সম্পন্ন হয়েছে। জুনের মধ্যে সারা দেশ এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। মাত্র ২৮ দিনে ভূমির নামজারি সম্পন্ন হবে। ভুক্তভোগীদের দাবি, জমির নামজারির জন্য ভূমি অফিসে ফি জমা দেয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি হয় না। নামজারির জন্য ভূমির মালিককে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র এসি ল্যান্ড কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। সেখান থেকে তা পাঠানো হয় তহশিলদারের কার্যালয়ে।

তহশিলদার ‘সন্তুষ্ট হলে’তা পাঠান ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এরপর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তখন এ প্রক্রিয়ায় জড়িত হন ভূমি অফিসের নাজির। এছাড়া জমির ক্রেতা-বিক্রেতাকে ল্যান্ড ট্রান্সফার (এলটি) নোটিশ দেয়া হয়। সবকিছু ঠিক থাকার পরও ভূমির মালিককে নামজারি করার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। একই সঙ্গে ভূমি অফিসের প্রায় প্রতিটি ধাপে ঘুষ দিতে হয়। এ কারণে সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে ভূমি খাতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাত বলা হয়েছে। এরপরই সরকার এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি মালিকের রেজিস্ট্রি দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভারে। সেখান থেকে একটি মিসকেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে এলটি নোটিশ চলে যাবে। একই নোটিশ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাওয়ার পর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরেজমিন তদন্ত করে সরকারের কোনো রাজস্ব ক্ষতির কারণ না থাকলে সার্ভারের মাধ্যমে এলটি নোটিশের জবাব এবং তার মন্তব্য বা সুপারিশ এসি ল্যান্ড অফিসে জানাবেন। পরে এসি ল্যান্ড অফিস তা বিবেচনা করে জমির নামজারি করে দিয়ে নতুন খতিয়ান তৈরি করে হস্তান্তর করবে।

এদিকে রোববার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ই-নামজারি সংক্রান্ত এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমির সঙ্গে মানুষের আমৃত্যু সম্পর্ক জড়িত। দেশের আদালতগুলোয় বিচারাধীন মামলার শতকরা ৮৫ ভাগ ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের অংশ হিসেবে আমরা ই-নামজারিতে হাত দিয়েছি। একসময় মানুষের মধ্যে ভূমির নামজারি নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভূমির গুরুত্ব।সরকারি প্রকল্প কিংবা কারও জমির পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা তৈরি করলে সে জমির মূল্য বৃদ্ধি পায়, জমির মালিক রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। এখন সবাই ভূমির সঠিক মালিকানা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

ভূমি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মাঠ প্রশাসনে ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সৎ, দক্ষ, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য অবশ্যই পুরস্কৃত করা হবে। পক্ষান্তরে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসৎ পন্থা অবলম্বনের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভালোর জন্য পুরস্কারের পাশাপাশি মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার করা হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করব। তিনি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমি সম্পদের হিসাবে নিয়ে নিয়েছি। সময় হলে ধরব। চুপ আছি মানে এই না যে আমি চুপসে গেছি। বরং আমি কালবৈশাখীর মতো আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভূমি মন্ত্রণালয় দুর্নীতি করে না। বরং কিছু ব্যক্তি দুর্নীতি করেছে, ব্যক্তির স্বার্থে। সরকারের বা মন্ত্রণালয়ের হয়ে কেউ দুর্নীতি করেনি।

১০ এপ্রিল থেকে ভূমি সেবা সপ্তাহ ও ভূমি করমেলা করা হবে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য হটলাইন সেন্টার স্থাপন করছি। এক মাসের মধ্যে তা চালু করতে সক্ষম হব। আর প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনদের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ওয়েবসাইট খুলছি শিগগিরই। তাদেরও ই-সেবা দেয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে গোটা ভূমি মন্ত্রণালয়কে আমার সঙ্গে থাকতে হবে।ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়। অর্ধেকের বেশি জনবল নেই। অনুমোদিত পদ থাকা সত্ত্বেও জনবল সংকট আছে। মামলার কারণে নিয়োগ দেয়া যায় না। নিয়োগবিধি হালনাগাদ করার কাজ চলছে। আশা করি, জনবল সংকট কেটে যাবে। জনবল নিয়োগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। অনেক জায়গায় ভূমি অফিস নেই। অফিস স্থাপনের কাছ চলছে। টেন্ডার হয়েছে। কাজ এগোচ্ছে। নামজারিতে আগের চেয়ে বেশি টাকা লাগছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগে ভূমি অফিসে যাতায়াতে যে টাকা ব্যয় হয় তার চেয়ে বেশি খরচ হয় না নিশ্চয়ই। সুতরাং এ খরচটুকু মেনে নিলে সেবাপ্রত্যাশীরা উপকৃত হবে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর