ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্ট পুনর্নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৫শে জুন ২০১৯ ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্ট পুনর্নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সিলেট থেকে ঢাকা আসার পথে উপবন এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় রেল সেতুর কোনো সমস্যা ছিল না বলে জানিয়েছেন রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, একটি বগির চাকা খুলে গিয়েছিল। যে কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে চাকাটি কেন খুলেছিল, সেটি এখনো জানা যায়নি। দুর্ঘটনার কারণ জানতে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটির নেতৃত্বে আছেন আঞ্চলিক কর্মকর্তা এবং একটির নেতৃত্বে বিভাগীয় কর্মকর্তা। এই দুটি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সব কিছু স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় একটি রেলসেতুর ওপর। উপবন এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যূত হয়ে কালভার্ট ভেঙে খালে পড়ে যায়। তাই শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল কালভার্টের সমস্যায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে কি না।

তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা উঠে। পরে পুলিশ চার জনের মরদেহ উদ্ধার এবং ৬৭ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের কথা জানায়। আর শুরুতে প্রশ্ন উঠে, রেল সেতুর কোনো দুর্বলতা আছে কি না। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মন্ত্রিসভাতেও। তবে সেখানেও রেলমন্ত্রী জানান, কালভার্টে সমস্যা ছিল না। যদিও এ বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার। আর প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে তারা দেখেছেন, কালভার্টের সমস্যায় এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। রেলওয়ের পরিচালক (প্রকৌশল) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘দুর্ঘটনাটি ঘটেছে একটি বগির চাকা খুলে যাওয়ায়। কুলাউড়ার বরমচালের যে কালভার্টের ওপর থেকে ট্রেনটি পড়ে যায় তারও প্রায় পাঁচশ ফুট আগে ট্রেনের ১২ নম্বর বগির চাকা খুলে যায়।’

‘চাকা খুলে গেলেও ইঞ্জিন গাড়িটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কালভার্টে এসে গাড়িটি আর ভারসাম্য রাখতে পারেনি। যে কারণে ১৩ ও ১৪ নম্বর বগিটি কালভার্ট ভেঙে নিচে পরে যায়।’ কালভার্ট ভেঙে দুর্ঘটনাটি ঘটার খবর চাওর হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই কর্মকর্তা বলেন, যেখানে এবং যেভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘এমন অনুমান জনমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ভুল কিছু নয়। কারণ তারা যা দেখেছে সেটাই বলছে। কিন্তু চাকা খুলে যাওয়ার বিষয়ে তাদের তো জানার কথা না।’ তবে রেল লাইনে কিছু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ থাকতে পারে বলে স্বীকার করেছেন এই প্রকৌশলী। বলেন, ‘আমাদের রাস্তার বয়স একশ বছরেরও বেশি। এখানে কিছু ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে কালভার্ট ভেঙে পড়ে যাওয়ার মতো া থাকলে সেটা অবশ্যই মেরামত করা হতো।’

এই দুর্ঘটনাটি নিয়ে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ট্রেনটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল এবং এটাও দুর্ঘটনার একটি কারণ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস সেতুতে মেরামতের জন্য গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে ট্রেনে চাপ পড়ে বেশি। বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ হুমড়ি খেয়ে রেলে ওঠে। তাই এই দুর্ঘটনা।’ তবে এই দুর্ঘটনার পর রেল সেতুতে কোনো দুর্বলতা আছে কি না, সেটি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়ে নাজুক সেতুগুলো শনাক্ত করে নতুন করে নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে গতকাল সকালেই তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্বাঞ্চল) মো. মিজানুর রহমানকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’ বিভাগীয় পর্যায়ের আরও একটি কমিটি ঘটনের কথাও জানান রেল এর মহাপরিচালক। যে কমিটিতে কমিটিতে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। দুটি কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর