ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ছিনতাই-খুনসহ নানা অপরাধে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এখানকার জেলা পুলিশ দেশীয় অস্ত্রের আমদানি সহ এসব অস্ত্রের অপব্যবহার রোধে কার্যত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাতের নাগালের মধ্যেই দেশীয় অস্ত্র মেলে। এসব অস্ত্র সস্তা ও বহনেও সুবিধাজনক। তাই আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি সরাইলে কয়েকটি আলোচিত ঘটনার পর নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এটি এখনই থামাতে না পারলে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে আশঙ্কা তাদের। পুলিশ সূত্রে জানা যায়- ছুরি, কাচি, হাঁসুয়া, চাপাতি, কুড়াল, দা, বটি, বল্লম, টেটা, তীর ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে পড়ে। এর বাইরে লাঠি, ঠ্যাঙ্গাও দেশীয় অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়, যদি তা দিয়ে মানুষের জীবননাশের হুমকি থাকে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর এক কর্মকর্তা জানান, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে কেউ রেহাই পায় না। অস্ত্র মামলায় সাজার পরিমাণ বেশি, পুলিশও তৎপর থাকে বেশি। যে কারণে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কমে গেছে। সারাবছর এসব অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের নানারকম অভিযান থাকে, ফলে এখানে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
প্রসঙ্গত, ১০ আগস্ট দিবাগত রাতে সরাইল সরকারি কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র ইকরাম হোসেনকে দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যে ঘটনা পরে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরআগে এক দাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে সরাইল থানার নবাগত ওসি সাহাদাত হোসেনসহ চার পুলিশ অফিসার আহত হন। সরাইল থানা কমপ্লেক্সের সামনে সড়কে দু’দলের দাঙ্গা রোধ করতে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তৎকালীন ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়াসহ তিন পুলিশ অফিসার আহত হন। পানিশ্বর এলাকায় একদল ডাকাত দেশীয় অস্ত্রের সাহায্যে মোশাহেদ উল্লাহ রফিক নামে এক ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সরাইলে বেশকয়েকটি দাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় এখানে দেশীয় অস্ত্রের অপব্যবহার নিয়ে পুলিশ প্রশাসন সহ সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ সাহাদাত হোসেন টিটো সাংবাদিকদের বলেন, এখানে দেশীয় অস্ত্রের অপব্যবহার রোধে পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে ও বাহির থেকে যেন এখানে দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করতে না পারে, সেই ব্যাপারে পুলিশ কার্যত ভূমিকা রাখছে। এখানকার কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। দেশীয় অস্ত্র রোধে এই কমিটি কার্যত ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও দেশীয় অস্ত্রের অপব্যবহারের কুফল নিয়ে এখানে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন পিপিএম (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সরাইলে দেশীয় অস্ত্রের অপব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সরাইলে দেশীয় অস্ত্র আসে নরসিংদী জেলার রায়পুরা ও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকা থেকে এমন তথ্য পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। যারা দেশীয় অস্ত্র আমদানি ও তৈরি করে দিবে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।