অপরুপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি চর বিজয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাকিবুল ইসলাম তনু, জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: সোমবার ৯ই ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:১৪ অপরাহ্ন
অপরুপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি চর বিজয়

চারদিকে সাগরের অথৈ জলরাশি। পশ্চিম দিকে হাজারো অতিথি পাখি আর পান কৌড়ির কিচির মিচির কলতানে মুখরিত। পূর্ব দিকে লাল কাকড়ার অবিরাম লুকোচুরি খেলা। নিচে শুধু ধু ধু বালুচর। চারপাশে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। সমুদ্রের মাঝে সূর্যের আলোর চিকচিক দৃশ্যের সাথে ঢেউয়ের খেলা। নেই কোন বসতি, নেই কোন গাছপালা। নেই কোন মানুষের কোলহল। রয়েছে এই একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যদয়-সূর্সাস্তের অবলোকনের দৃশ্য। এ যেন সমুদ্রের মঝে নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। এ দৃশ্য প্রকৃতির খেলায় বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা কুয়াকাটার চর বিজয়ের। 

২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে পূর্ব দক্ষিন দিকে গভীর সমুদ্রে এ চরের সন্ধান পায় ট্যুরিজম ব্যবসায়িরা। প্রায় ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও দেড় কিলোমিটার প্রস্থ এ চরটি। তখন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন পর্যটকদের কাছে চরটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে বাগান সৃজনের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২ হাজার চারা রোপন করেন। এসময় জাতীয় পতাকা ও সাইনবোর্ড টানিয়ে চরের নামকরণ করেন ‘চর বিজয়’। তবে জেলেসহ স্থানীয়দের কাছে এ চরটি হাইরের চর নামেও পরিচিত। কুয়াকাটা সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট বোট নিয়ে মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় এ চরটিতে। 

জেলেরা জানান, বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস চরটি সাগরের পানিতে হাটু পরিমাণ ঢাকা থাকে। আবার শীত মৌসুমে উঁকি দেয়। এসময় ছোট ছোট ডেরা তৈরি করে শুঁটকি করার জন্য দুই তিন মাস এ চরে অবস্থান নেয় জেলেরা।

চর বিজয় ঘুরে আসা ঢাকার বাসিন্দা সিমা আক্তার বলেন, চর বিজয়ের নাম শুনে আমরা সেখানে যাই। অনেক আনন্দ করি। জেলেদের জাল দিয়ে চরে মাছশিকার ছিল বেশি আনন্দময়। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় চরটিতে অপরূপ দৃশ্য আর ঢেউ’র শব্দ, অগণিত অতিথি পাখির কিচির মিচির ও লাল কাঁকড়াদের বর্ণিল আলপনা অসাধারন

লেগেছে। অপর এক পর্যটক আক্তার হোসেন জানান, গভীর সাগরে জেগে আছে মনোমুগ্ধকর দ্বীপ চর বিজয়। চারদিকে সাগরের অথৈ পানি। চরে নেমেই কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাই। প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। চর বিজয়ের নামকরণকারীদের একজন ট্যুরিজম ব্যবসায়ি হোসাইন আমির বলেন, সমুদ্রের মাঝে জেগে ওঠা চরটি ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর বিজয়ের এই মাসে আবিষ্কার হয়েছে। তাই এ চরটির নামকরন করা হয় চর বিজয়। ফটো সাংবাদিক আরিফুর রহমান বলেন, এ চরটি নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। সম্ভাবনাময় এই চরটি ইতোমধ্যে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। 

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ.বারেক মোল্লা বলেন, এ চরটিতে শৌচাগার, পিকনিক স্পট, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ করা প্রয়োজন। কিন্তু পৌরসভার বাইরে হওয়ায় এসব কাজ করা যাচ্ছেনা। তবে এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান জানান, চর বিজয় অতিথি পাখিদের অভয়রন্য একটি দ্বীপ। এটি রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর