ইনিউজ৭১ এ সংবাদ প্রকাশের পর স্বজনদের কাছে ঠাঁই পেলেন সেই বৃদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ২৪শে জুন ২০২০ ১০:১৮ অপরাহ্ন
ইনিউজ৭১ এ সংবাদ প্রকাশের পর স্বজনদের কাছে ঠাঁই পেলেন সেই বৃদ্ধা

অনলাইন গণমাধ্যম ইনিউজ৭১সহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আগৈলঝাড়ার দীপু বালা নামের সেই বৃদ্ধা (৭০) ঠাঁই পেলেন স্বজনদের কাছে। ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল গত সোমবার বিকেলে বরিশালের আগৈলঝাড়া-ঢাকা-পয়সারহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুল্লশ্রী বাইপাস বাস স্ট্যান্ডে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কের পাশে পড়ে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধা দীপু বালার স্বামী ও বাবার বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আস্কর গ্রামে। স্বামী অশ্বিনী বালা ৩-৪ বছর আগে মারা যান। দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান নেই। মানুষের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি। বরিশাল কাঠপট্টি রোডের ধীরেণ সিকদারের বাসায় কাজ করতেন। ওই বাসায় কর্মরত অবস্থায় ৪-৫দিন আগে শরীরে দুর্বলতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে হঠাৎ অসুস্থ হন তিনি। তার মালিক ধীরেণ সিকদার স্থানীয়ভাকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে দেন। খবর দেওয়া হয় তার গ্রামের বাড়িতে।

আস্কর গ্রামের বাড়ি থেকে তার ভাই মনোরঞ্জন সাহার ছেলে মিথুন সাহা বরিশাল থেকে সোমবার বৃদ্ধা পিসিকে বাড়ি আনতে গিয়ে গন্তব্য পয়সারহাট বাস স্ট্যান্ডে না নেমে পথিমধ্যে আগৈলঝাড়া বাইপাস সড়কের বাসস্ট্যান্ডে নামেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ও দুর্বলতার কারণে চলাফের করতে না পারা পিসি দীপু বালাকে ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সড়কের পাশে রেখে সটকে পরেছিলেন ভাইপো মিথুন। নড়াচড়া করতে না পেরে অসুস্থ বৃদ্ধা সড়কের উপরই শুয়ে পড়েন বাধ্য হয়ে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় গড়িয়ে গেলেও আর দেখা মেলেনি ভাইপো মিথুনের।

সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে যায়। বৃষ্টি আসন্ন দেখে সাংবাদিকেরা বৃদ্ধা দীপু বালাকে সড়কের পাশে একটি হোটেলের বারান্দায় নিয়ে বসান।

এক পর্যায়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানাকে অবহিত করলে উপজেলা প্রশাসনের কোনো লোক এগিয়ে না এলেও ওসির নির্দেশে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। এরপর হাসপাতালে যান থানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন। অসুস্থ বৃদ্ধার চিকিৎসা, খাদ্য সহায়তাসহ আনুসাঙ্গিক সব সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেন তিনি।

এ ঘটনায় গত ২২ জনু “আগৈলঝাড়ায় রাস্তায় ফেলে যাওয়া অসুস্থ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ” এমন সংবাদ ইনিউজ৭১ এ প্রকাশের পর পুলিশ প্রশাসনের কাছে এই অমানবিক আচরণের জন্য ভুল স্বীকার করে সেই বৃদ্ধার ভাই মনোরঞ্জন সাহার ছেলে মিথুন সাহা ও তার পরিবারের লোকজন। বৃদ্ধা দীপু বালাকে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন জানান, বৃদ্ধাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল পাঠানো হয়েছে। তাকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, মনোরঞ্জন সাহার ছেলে মিথুন সাহা ও তার পরিবারের লোকজন অমানবিক আচরণের জন্য ভুল স্বীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে আগৈঝাড়া পুলিশ বৃদ্ধার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান, খাদ্য, ওষুধ ও আনুসাঙ্গিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ওসি আরও জানান, সার্বক্ষণিক ওই বৃদ্ধার খোঁজ-খবর নিবেন তিনি। পরবর্তীতে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কোনো অমানবিক আচরণ করা হলে ছাড় দেওয়া হবে না।