করোনা আর সংকটের আখড়ায়! শিক্ষার্থীরা বাঁচতে চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২৩শে আগস্ট ২০২০ ১০:০৫ অপরাহ্ন
করোনা আর সংকটের আখড়ায়! শিক্ষার্থীরা বাঁচতে চায়

করোনাকালীন যে সংগ্রামে উপনীত সমগ্র মানবজাতি, তা যেন বিশ্ব সংগ্রামের মতোই দাপুটে গর্জনে বিরাজ করছে। যুদ্ধ! মহাযুদ্ধ! বিপর্যস্ত চারিদিক। স্থবির, প্রাণহীন হতে চলেছে নগরের প্রাণচাঞ্চল্য! সকল নীতিমালা, আইন-কানুন যেন ধসে গেছে এই করোনাভাইরাসের নির্মম দাপটে।জ্ঞানার্জন, জ্ঞানচর্চা নিজেকে গড়ে তোলার কার্যক্রমের পালে উল্টো টান লাগিয়েছে সে। 

বলছি! শিক্ষার্থীদের কথা। যারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কিংবা এসব প্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে, কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পথকে অনুসরণ করছিলেন। সবকিছুর মাঝেই হঠাৎ এসে পণ্ড করে দিলো করোনা। বন্ধ হল দুনিয়ার ছুটে চলার মহাযজ্ঞ! বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সোজা বক্তব্যে, "যেন ভেঙে পরেছে শিক্ষাব্যবস্থা" ভেঙে পরেছে সবকিছু। 

ঘুম নেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের, শিক্ষকদের।চিন্তার পাহাড় অভিভাবকদের, শিক্ষার্থীদের আর শিরে সংক্রান্তি হল চাকুরি প্রত্যাশীদের। বেহাল দশা-ই বলতে হবে।প্রাথমিক শিক্ষা প্রায় বন্ধ বলাই যায়। স্কুল তো বন্ধ। ঘরে যেটুকু সম্ভব চলছে! নাহ। আসলে চলছেনা। মাধ্যমিকের চাঞ্চল্য নিয়ে বলতে গেলে একটু বলতে চাই "বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শাখার" যে দাপুটে আর বিভাজিত পথচলা ছিল, তাদের ছন্দে শোচনীয় পতন বিরাজমান। কৌতুকরসে বললেও বাক্যের ভাবার্থ কিন্তু নির্মম। ২০২০ সালের ব্যাচ এসএসসি" ব্যাচ পাশ করলো। এখন ভর্তি চলমান তাও বিলম্বের মহা বিপত্তির পর চলছে। 

ভবিষ্যতে কবে ক্লাস হবে জানা নাই। তবে স্কুল বিষয়ে সরকার ও আইসিটি মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগ হেতু শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অনুমোদনক্রমে টেলিভিশনে পাঠদান পরিচালনা অব্যাহত আছে। যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়। আমার জানা মতে শিক্ষকদের অনেকেই এখন অনলাইনে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। এবার আসি উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) নিয়ে। হৃদয়ে কেমন একটা চাপ আসলো! কারণটা সবারই জানা। আটকে আছে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা। আশার বাণী হল "পরীক্ষা হবার আগে অন্তত ১ মাস পরীক্ষা প্রস্তুতির সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা " 

করোনা পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহ নানাবিধ কারণে যেন আরও বিপদে আছে শিক্ষার্থীরা। মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটেছে। অর্থের সংকট, খাবারের সংকট , আবাসনগত সমস্যা, পানিবন্দী জীবন সহ নানাবিধ সংকটে জর্জরিত, ক্ষত বিক্ষত শিক্ষার্থীরা তথা দেশের মানুষ। সংখ্যাটা খুব যে কম তা নয়। বেশ বড়ই। সান্ত্বনা না জানিয়ে একটা উপদেশ উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের প্রতি " আপনার কাজটা আপমাকেই করতে হবে, বাঁধা আসবে, সংকট আসবে, খেয়াল রাখবেন, সতর্ক থাকবেন, লক্ষ্য যেন চ্যুত না হয়, পরিবার সমেত বেঁচে থাকতে হবে, ভরসা মহান স্রষ্টার প্রতি" 

তাই প্রস্তুতি নিতে থাকুন । গড়ে তুলুম নিজেকে আরও শক্তভাবে। যেখানে ত্রুটি আছে সময় নিয়ে ত্রুটিমুক্ত হোন । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি ৩ টি সদ্য প্রকাশিত, আমি শেষ পয়েন্টটি বলছি "যদি ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠান খোলা না যায় তবে পরের ধাপে পদন্নোতি দেয়া ছাড়া উপায় নেই " এতে আনন্দিত হবার কিছু নেই। জ্ঞানের ঘাটতি যে কত বড় বিপদ তা পরবর্তীতে বোঝা যায়। যে পড়েছে সে জেনেছে আর যে জানেনি সে কোনোভাবেই পড়াশোনা করা মানুষটির মতো নয়। এটাই বাস্তব। 

বিশ্ববিদ্যালয় গুলো স্বায়ত্তশাসিত। তবে নির্দেশনা দান করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা (স্নাতক, স্নাতকোত্তর) সহ যাবতীয় গবেষণামূলক কাজগুলো হয়ে থাকে। এখন কথা হল এই পর্যায়সমূহে শিক্ষার্থীদের  আলাদা চাপ থাকে, বলতে গেলে ক্লাসের পড়া, পাশাপাশি চাকরির পড়াশোনা আরও অনেক বিষয় । সব মিলিয়ে মাথায় অনেক চাপ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব বন্ধ। কিন্তু সময় তো বসে নেই। বয়সও বসে নেই। সবই যে বাড়ছে ! 

সেশনগুলো আটকে যাচ্ছে।  "সেশনজট" নামক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়টি ঘটে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মঞ্জুরি কমিশনের উদ্যোগে অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ চলমান আছে। তবে এক্ষেত্রেও সংকট রয়েছে। প্রথমত অনলাইনে সংযোগ ( connectivity) ইন্টারনেট ক্র‍্য়, ইন্টারনেটের গতি। ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল বা ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার ক্রয়ের সমস্যা। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য। যদি ২০% শিক্ষার্থীও ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয় আর বাকি ৮০% শিক্ষার্থী ক্লাস নিয়মিত করে, তবুও হিসাব করলে সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশ বড়। কথা হল বঞ্চিত  কেন হবে। সবার তো অধিকার আছে শেখার। আবার পড়াশোনা না চালালেও তো পিছিয়ে যাচ্ছে! 

অবস্থাটা এমন "যেন সমুদ্রে মাছ রয়েছে! খাদ্য হিসেবে কিছু একটা ভাসছে! খাদ্যবস্তু লোহার পেঁরেকে বিদ্ধ। মাছ খাদ্যে কামড়ে দিতেই গলায় আটকে গেলো , ফেলতেও পারছেনা গিলতেও পারছেনা এমন " এজন্য আশার বাণী ২৩ আগস্টের মাঝে যেসব শিক্ষার্থী ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংক্রান্ত সংকটে আছেন তাদের তালিকা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। অধিকার হিসেবেই পাশে থাকবে প্রশাসন যাতে ডিভাইস ক্রয় করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিতে পারে। 

ইন্টারনেট প্রদানের বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানতে পেরেছি। এখন পারস্পরিক সহযোগিতা করে পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়া ছাড়া আপাতত পথ খোলা নেই।করোনা কালে অবশ্যই উচিৎ শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা।স্বাভাবিক ব্যবস্থা (যা চলমান ছিল) তা পরিবর্তন করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা।যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সে হিসেবে অনলাইনে পাঠদান চালানোর ব্যাপারে নতুন নতুন পদ্ধতি সামনে নিয়ে আসা জরুরি। যা হতে পারে সহজ, জটিলতা মুক্ত।    

দেশের শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক অবস্থা এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে। চেষ্টা থাকবে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। যদিও হয় তবে দেখা দরকার কী কারণে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সমাধান শিক্ষা মমন্ত্রনালয়ের  পক্ষ থেকেই আসা দরকার জোরপূর্বক, চাপিয়ে দেওয়া কিংবা আচরণে কঠোরতা ত্যাগ করে সহযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভাবতে হবে দেশের আগামী দিনগুলো নিয়ে। 

আগামী দিনে  শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কতটা কার্যকরী হবে এবং মানবিকতাবোধ, সততাবোধ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হবে তার উপর ভাবনা রাখতে হবে এখনই। প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে ভ্যাক্সিন ছাড়া করোনা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘদিন প্রয়োজন। যা দেশের শিক্ষার জন্য খারাপ খবর। 

মোটকথা, শিক্ষা দরকার সব ক্ষেত্রেই। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, মনুষ্যত্ববোধ আসবে শিক্ষা থেকেই। সহানুভূতিশীল হতে হবে যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে । করোনা কালে সেই শিক্ষাই কামনা করি যে শিক্ষা মানবিক, সহানুভূতির, পারস্পারিক সহযোগিতার বীজ বপনেই ক্ষান্ত নয় এর ফলাফল প্রদর্শনেও সক্ষম। 

যারা চাকরি প্রত্যাশী ! তাদের চাপ বেড়ে গেছে বহুগুণ। প্রার্থনা করছি এই সংকট যেন দ্রুত কেটে যায়। শিক্ষিত বেকারত্বের হার না বাড়ুক। উদ্যোক্তা হিসেবে উৎসাহিত করা, দিকনির্দেশনা প্রদানের বিষয়ে সরকার ভাবছে । কারিগরি শিক্ষায়ও জোর দেয়া হতে পারে।অনেকেরই চাকরি আটকে আছে নিয়োগ আর কর্মে যোগদানের অপেক্ষায়।আবার, 

প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন অনেকেই।কেউ সরকারি চাকুরীর জন্য,  কেউ বিসিএস, কেউ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জন্য, ব্যাংকিং শিক্ষকতা  ইত্যাদি চাকুরীর জন্য।মূল কথা হল নিজেকে টিকে থাকতে হলে কাজ করতে হবে। পথ বানিয়ে নিবে মানুষ । বিগত শতাব্দীতে সংকটেও নিয়েছিল।  যারা ব্যবসায় আগ্রহী তাদের জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম বর্তমান পরিস্থিতে এক আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য ইতিবাচক জ্ঞান এবং সঠিক  নির্দেশনা যথেষ্ট হতে পারে। কোনো কাজই ছোটো নয়। সৎভাবে কর্ম করে উপার্জনেই মূল প্রশান্তি।

কবিগুরু লিখে গেছেন "উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, “ভয় নাই, ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।”বাঁচতে হবে সবকিছু নিয়েই। টিকে থাকতে হবে আপন জোর নিয়ে। মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে পারস্পারিক সহযোগিতায় বেঁচে থাকবে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি শিক্ষার্থী। সহানুভূতিশীল হবো আমরা সবাই, সবার প্রতি।  এগিয়ে চলবে দেশ, সমগ্র বিশ্ব।এমনই আকাঙ্খা নিয়ে যবনিকাপতন ঘটলো।


আসিফ মাহমুদ আমিন 
বাংলা বিভাগ 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।