বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। যখনই টিকা আবিষ্কার হোক বাংলাদেশ পাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ভ্যাকসিনের জন্য সরকার আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাসের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ সামাল দিতে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের বিশেষ ও দশম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ৮ নভেম্বর শুরু হয় সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন। মোট ১০ কার্যদিবস চলে এই অধিবেশন। এতে নয়টি বিল পাস হয়। অধিবেশনটিকে প্রধানমন্ত্রী সফল ও ফলপ্রসূ একটি অধিবেশন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সংসদ নেতা।করোনা মহামারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ সারা বিশ্বজুড়ে এই মহামারি দেখা দিয়েছে। এখন দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। আমরা তা সামাল দিতে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। আমরা আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছি। টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে পাবো।’
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবার প্রতি আহ্বান, অন্তত মাস্কটা পরে থাকুন। ভাইরাসটি যেন কারো শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে।’ এ সময় তিনি করোনা থেকে বাঁচতে গরম পানি পান, গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গার্গিল, বেশি বেশি হাত ধোয়া এবং যেখানে লোক সমাগম বেশি সেখানে মাস্ক পরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন, সবাই সচেতন হলে দেশবাসী করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পাবে। তিনি সবার সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
‘শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারি না’এর আগে সমাপনী ভাষণে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী এর জবাবে বলেন, ‘আমেরিকায় কিন্তু স্কুল খুলে দিয়েছিল একটা পর্যায়ে তারা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইউরোপে এরকম ঘটনা ঘটে, ইংল্যান্ডেও ঘটে। তার কারণ সেখানে ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। আমরাও একটা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যখনই করোনার প্রকোপটা কমে গেল আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু তারপর দেখলাম আবার ইউরোপে করোনার প্রকোপ দেখা দিল। এই যে ছেলে-পেলেগুলো স্কুলে যাবে বাচ্চারা। শিক্ষকরা বা বাচ্চাদের অভিভাবক সবাইকে যেতে হবে। এটা একটা সংক্রামক ব্যাধি এখনো এটার চিকিৎসা বের হয়নি তারপরেও আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি মানুষ ভালো হচ্ছে। সেখানে এই ঝুঁকিটা আমরা ছেলে মেয়েদের জন্য কেন নেব? হ্যাঁ, এটা ঠিক স্কুল না যেতে পেরে বাচ্চাদেরও কষ্ট হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকাল তো সবাই সুখি পরিবার বানাতে যেয়ে হয়তো একটা বাচ্চা দুইটা ঘরে এককভাবে থাকে। আগে তো একান্নবর্তী পরিবার ছিল সবাই একসাথে থেকে হেসে খেলে চলত। এখন তো সেই সুযোগটা কম। যার জন্য বাচ্চাদের খুবই কষ্ট হয় এতে কোনো সন্দেহ নাই। তারপরেও তাদের তো মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দিতে পারি না। সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই চেষ্টাটা আছে।’
শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশনের বিরুদ্ধে যারা বলেন তাদেরও সমালোচনা করেন সরকারাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগে তো এই সেমিস্টার ব্যবস্থা ছিল না, আমি প্রথমবার সরকারে এসে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করি। কাজেই সেখানে সারা বছর তারা যে পরীক্ষা দিয়েছে তারই ভিত্তিতে একটা রেজাল্ট দেয়া এটা কিন্তু ইংল্যান্ডেও দিয়েছে। এটা পৃথিবীর অনেক দেশেই দিয়েছে। এতে খুব বেশি একটা ক্ষতি হয় তা না। তারা তারপর তো স্কুল করবে, পড়বে, পরীক্ষা দেবে। যারা টিকে থাকবে থাকবে, না হলে আবার পরীক্ষা দেবে। সেই সুযোগটা তাদের আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই অটো প্রমশনে খুব ক্ষতি হয়ে গেল এটা কিন্তু ঠিক না। ওই একদিন বসে লিখে পাস করলেই সেই পাস, পাস, আর সারাবছর যে পরীক্ষা দিয়ে যে রেজাল্ট সেই রেজাল্ট, রেজাল্ট না এটা তো হতে পারে না বরং সেইভাবে যদি সারাবছরের রেজাল্ট এক সাথে করে প্রমশন দিয়ে দেয়া যায় তাহলে সেটা তো আরো তাদের মেধার পরিচয়টা পাওয়া যায়। আরও ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায় তাতে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।