পদ্মা সেতুতে ছাত্রলীগকে 'আগাম দাওয়াত'

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২১শে মে ২০২২ ০৭:৫০ অপরাহ্ন
পদ্মা সেতুতে ছাত্রলীগকে 'আগাম দাওয়াত'

আগামী জুন মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জুন মাসেই চন্দ্রালোকিত পূর্ণিমার রাতে বাংলার মানুষ পদ্মা সেতু থেকে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাবে। আগামীকাল রোববার আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সামারি (সারসংক্ষেপ) পাঠাব। তিনি যে সময় নির্ধারণ করে দেবেন, সে সময়েই পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হবে। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি নেতা-কর্মীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ছাত্রলীগকেও আমি আগাম দাওয়াত দিলাম।’


আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফিরেছিলেন।


আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আর বেশি দূরে নয়। সেতু উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে পঁচাত্তর-পরবর্তী গত ৪৭ বছরে সবচেয়ে সৎ নেতা, দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিক এবং সবচেয়ে সাহসী ও জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আমাদের পূর্ব পৃথিবীর সূর্য। ১৩ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ মিলিয়ে দেখুন। কোথায় ছিল আর আজকে কোথায়! শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলেই সারা বাংলার চেহারা বদলে গেছে।


দেশের মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভালো লাগে না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাঁদের খুব অন্তর্জ্বালা হয় যে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল হয়েই গেল! নির্বাচন এলে তাঁরা কী দেখিয়ে ভোট চাইবেন? তাঁদের নেতাটা কে? পলাতক দণ্ডিত তারেক রহমান? প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? দণ্ডিত ব্যক্তি? ১৩ বছর আন্দোলন করলেন, ঈদ এলে বলেন ঈদের পর, পরীক্ষা এলে বলেন পরীক্ষার পর। কত ঈদ আর পরীক্ষা এল আর গেল। দেখতে দেখতে প্রায় ১৪ বছর হলো। আন্দোলন হবে কবে? সেখানে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, নির্বাচনেও ব্যর্থ হয়েছেন। এখন বলছেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস করে পরবর্তী নির্বাচনে জিতবে। সন্ত্রাসীদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দল বিএনপি। এক নেতা অ্যাসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়) চাইতে গেছেন। সেখানে আদালত রায় দিয়েছেন, বিএনপি একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সংগঠনের নেতাকে অ্যাসাইলাম দেওয়া যায় না। তাঁদের সন্ত্রাস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সন্ত্রাস করে বন্দুকের নল উঁচিয়ে তাঁরা ক্ষমতায় এসেছিলেন। শেখ হাসিনার শক্তির উৎস এ দেশের মাটি ও জনগণ।’


এ সময় ওবায়দুল কাদের সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, গাজীপুর থেকে সিটি গেটের কাছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট হচ্ছে। এর ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের তিন ভাগের এক ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে নদীর তলদেশে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার একমাত্র টানেল হচ্ছে। টানেলের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী প্রকল্প অনেকদূর এগিয়ে গেছে, এগিয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাজও।


বিএনপি বঙ্গোপসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল কথায় কথায় বলেন, বাংলাদেশে কথা বলার অধিকার নেই। ফখরুল সাহেব, আপনার মুখ কেউ বন্ধ করেনি। আপনি কথা বলেন এবং অনেক বেশি বলেন, যে কথাগুলোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভুলে গেলে চলবে না, শেখ হাসিনা দেশে ৪৬টি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, ৪৮টি জাতীয় পত্রিকা, ১২ হাজার অনলাইন পোর্টালের অনুমোদন দিয়েছেন। তারপরও বলেন যে কথা বলার অধিকার নেই। এ ছাড়া বাংলা দৈনিক আছে ২১৮টি, ইংরেজি আছে ৪০টি, আঞ্চলিক পত্রিকা আছে ২৯৩টি। তারপরও বলেন গণতন্ত্র নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। মির্জা ফখরুল সাহেবরা আমাদের বঙ্গোপসাগর দেখান! কাদের বঙ্গোপসাগর দেখান? ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আপনার ম্যাডাম খালেদা জিয়া তথাকথিত নির্বাচন করেছিলেন, সেই নির্বাচনের ১৫ দিন পর ১৬ দিনও ক্ষমতায় থাকতে দিইনি।’


সভায় আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ সামাদ। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগে তখন ঐক্যের সংকট ছিল, দলের ভেতরে নানা অন্তর্ঘাত ছিল এবং সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এই দলকে বিভক্ত করার জন্য নানা চেষ্টা করছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে শেখ হাসিনা দেশে এসেছিলেন। সেদিন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কথা বলেছিলেন, খুনি সামরিক শাসকদের কাছে বিচার না চেয়ে তিনি দেশের জনগণের কাছে বিচার চেয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, বহুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন। কিন্তু এসব করেও বঙ্গবন্ধুকন্যাকে তারা দমাতে পারেনি। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল।’


ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সভায় অংশ নেন।