দেবীদ্বার উপজেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা; পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, উপজেলা প্রতিনিধি - দেবীদ্বার, কুমিল্লা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২৩ ০৭:২০ অপরাহ্ন
দেবীদ্বার উপজেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা; পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দলের সৎ, আদর্শবান, ত্যাগী এবং সক্রিয় নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে দলের মিছিল, মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে যাদের দেখা যায়নি, যারা কখনো আওয়ামী লীগ করেনি, যাদের কেউ চেনেনও না এমন লোকদের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।


গতকাল সন্ধ্যায় (সোমবার ২৩ জানুয়ারী) ৭১ সদস্যের উপজেলা কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পদবঞ্চিত উপজেলা নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটে।


২৬ বছর পর কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার উপজেলা কমিটি অনুমোদন দিলেও প্রায় এক সপ্তাহ পর সোমবার সন্ধ্যায় এ কমিটি জনসন্মুখে প্রকাশ করা হয়।


এর আগে সম্মেলনে সভাপতি এ,কে,এম সফিউদ্দিন ও সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধূরীসহ ৬ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও, স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল(এমপি), আওয়ামী লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক রোশন আলী মাষ্টার এবং দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদসহ ৩ নেতার সমর্থকদের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা নিয়ে জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি।

  

দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আবুল কাসেম ওমানী বলেন, ‘দেবীদ্বার উপজেলা আ’লীগের কমিটি’ আওয়ামী লীগের হয়নি। এটি এক জেলা নেতার আত্মীয় স্বজন, পিতা-পুত্র, সরকারি কর্মচারীর সমন্বয়ে পকেট কমিটি করেছেন। এ কমিটিতে জেলা সেক্রেটারী রোশন আলী মাষ্টার, উপজেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধূরী, সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন খোকন ও সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারসহ ৩/৪ জন ছাড়া আর কোন ত্যাগী নেতা কর্মী নেই।


সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কমিশনার মো. মুজিবুর রহমান বলেন-জেলার নেতৃত্বে অযোগ্য লোক থাকায় উপজেলা কমিটিও অযোগ্য লোকজন দিয়ে গঠন করা হওয়া স্বাভাবিক। যারা যুগপযোগী রাজনীতি বুঝেনা, যাদের রাজনৈতিক শিক্ষা নেই তাদের কাছ থেকে ভালো কমিটি আশা করা যায়না।


ইউছুফপুর ইউপি’র সাধারন সম্পাদক হাফিজ আহমেদ বলেন, বর্তমান কমিটিতে ২/৪ জন ছাড়া দলের নিবেদীতদের স্থান হয়নি। আমি ১৯৯২ সাল থেকে ইউনিয়ন আ’লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি, বিএনপি-জামাতের তোপের মুখে আমাদের দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসতে হয়েছে। যখন মানুষ জামাত-বিএনপির ভয়ে আওয়ামীলীগ করতে চায়নি তখনো দলকে সুসংগঠিত করতে শ্রম দিয়েছি। অথচ আমার মতো অনেকেরই স্থান হয়নি এ কমিটিতে।


তিনি আরো বলেন, দলের নেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে নিবেদীত কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি করেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের দাবী উপজেলায় নিবেদীত কর্মীদের এ কমিটিতে সংযুক্ত করে পুনর্গঠন করতে হবে।


উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান রিপন বলেন, জেলার সেক্রেটারী রোশন আলী মাষ্টার তার মনগড়া একটি পকেট কমিটি করেছেন। উপজেলা সম্মেলনে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (এমপি)- স্থানীয় এমপি ও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মতামত নিয়ে কমিটি ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ দিলেও, জেলা নেতৃবৃন্দ এর তোয়াক্কা না করে মনগড়া একটি কমিটি করে দিয়েছেন। এ কমিটিতে দলের ত্যাগীদের কোন মূল্যায়ন করা হয়নি। দলের দূর্দিনে যাদের কোন ভূমিকা নেই তারাই পদ পদবী পেয়েছে। 


স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।


কমিটি নিয়ে তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের জবাবে কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক রোশন আলী মাষ্টার বলেন, কিছু নেতা-কর্মীর ক্ষোভ থাকবেই, ২৬ বছর পর কমিটি হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর ৭১ সদস্যের কমিটি গঠনে সমস্যা থাকবেই। তবে যাদের কমিটিতে রাখা হয়নি এরা আ’লীগের পরিচয়ে থাকলেও নির্বাচনের সময় ধানের শীষের পক্ষে কাজ করেন। জয় বাংলা-ধানের শীষ মার্কা লোক কমিটিতে রাখা হয়নি।