বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। পাশাপাশি দেশ থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি দূর করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গতকাল দুপুরে খোকার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়ার পর এ অনুরোধ জানান ইশরাক। তিনি বলেন, ‘প্রায় সময়ই আব্বু বলতেন, যেই বাংলাদেশ নিজ হাতে স্বাধীন করেছি, সেই দেশে আমাকে কি বাক্সবন্দি হয়ে ফিরতে হবে? শেষ পর্যন্ত বাবার কথাই সত্যি হলো। তাকে দেশে আনা হলো, তবে সুস্থ অবস্থায় নয়, একেবারে কফিনে মুড়িয়ে বাক্সবন্দি করে।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ইশরাক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের অন্যতম অভিভাবক উল্লেখ করে দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাইÑ বাংলাদেশে প্রতিহিংসার যে রাজনীতি চর্চা, তার ভুক্তভোগী আমার বাবা, আমার পরিবার। বাবার সঙ্গে গত পাঁচ বছর কাটিয়েছি। অনেক কিছু শিখেছি। তিনি বলতেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এখানে আজকে যে হানাহানির রাজনীতি চলছে, এর জন্য বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকবে, বহু রাজনৈতিক দল থাকবে, আমাদের লড়াই হবে ভোটের মাধ্যমে।’ ইশরাক বলেন, ‘আজকে যে পর্যায়ে পৌঁছেছি, বিএনপির যারা আহত, নিহত ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, এই রাজনীতির চর্চা কতদিন চলবে? বাংলাদেশে দুজন অভিভাবক আছেন একজন খালেদা জিয়া, যিনি জেলে আছেন। আরেকজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায়? আপানারা এর সমাধান করে দেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খোকাপুত্র বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিনের যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো দূর করেন। আশপাশের স্বার্থবাদীদের বাদ দিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিয়ে যান। আমরা যারা নতুন প্রজন্ম, তারা চাই না আর কোনো বিএনপি পরিবার এই প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হোক এবং অন্য কোনো দল যদি ক্ষমতায় আসে, তখন আওয়ামী লীগের কোনো পরিবার প্রতিহিংসার শিকার হোক।’
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইশরাক বলেন, ‘আমার বাবা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে আপনারা যারা এসেছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে বাবার সঙ্গে সবার সুসম্পর্ক ছিল।’ দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে না পারায় বাবার বুকে চাপাকষ্ট ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে এখানে এসেছেন। ২০১৭ সালে বাবা পাসপোর্ট নবায়ন আবেদন করেছেন কিন্তু সেটা পাননি।’ ইশরাক বলেন, ‘বাবা বলেছেন তার জানাজা যেন দেশে হয়। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই বাবার মরদেহ দেশে আনতে সহযোগিতা করার জন্য। বাবা আমাকে বলেছিলেন, আমি বাক্সবন্দি হয়ে দেশে যাব। ঠিকই বাক্সবন্দি হয়ে এলো তার দেহটা। এ আমি কখনো ভুলতে পারব না।’
জানাজায় অংশ নিতে এসে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ মুক্তিযুদ্ধে খোকার অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি চমৎকার মানুষ ছিলেন। বিনয়ী ও মার্জিত আচরণের ব্যক্তি ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে আমাদের প্রত্যেকের ত্রুটি রয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা মানুষ হিসেবে ছিলেন অমায়িক ও ভদ্র।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।