চুরির টাকায় ভোগ-বিলাস সহ্য করবে না সরকার: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ৩০শে নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
চুরির টাকায় ভোগ-বিলাস সহ্য করবে না সরকার: প্রধানমন্ত্রী

অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনকে একটি রোগ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চুরির টাকা দিয়ে ভোগ-বিলাসে জীবন কাটানো সরকার সহ্য করবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভোগ-বিলাসি জীবন-যাপন করবেন, আর কেউ সৎভাবে, সাদাসিধে জীবন-যাপন করতে গিয়ে তার জীবনটাকে নিয়ে কষ্ট পাবেন, এটা হতে পারে না।’ শেখ হাসিনা শনিবার দুুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে বিরানী-পোলাও খাওয়া আর ব্রান্ডের জিনিস পরার চেয়ে সাদাসিধে জীবন যাপন করা অনেক সম্মানের। অন্তত, এটা অবৈধ, চোরা টাকা এই কথাটা সারাক্ষণ মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানোও যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আসলে এই টাকা বানানোটা একটা রোগ, এটাও একটা অসুস্থতা। একবার টাকা বানাতে থাকলে তার শুধু বানাতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু, ওই টাকার ফলে তার ছেলে-মেয়ে বিপথে যাবে, পড়াশোনা নষ্ট হবে, তারা মাদকাসক্ত হবে, সেটা দেখারও সময় নাই। টাকার পেছনে ছুটছেতো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।’

‘এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে সম্মানের সাথে চলবে। আর চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধ পথে অর্জিত টাকার বিলাসিতাকারিকে নিয়ে মানুষ মুখে যাই বলুক পেছনে একটা গালি দেবে। এই গালিটা শোনা না গেলেও গালিটা কিন্তু খেতে হয় সেকথাটা মনে রাখতে হবে।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ বক্তৃতা করেন। সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল এবং গোলাম রব্বানী বাবলু শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের সকল শহিদ, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার শহিদ, দেশ মাতৃকার সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারি এবং আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিটি নীরবতা পালন করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে, এটা অব্যাহত থাকবে। কারণ, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে, কারো ভোগ বিলাসের জন্য নয়।

বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দল গোছানোর জন্য দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য সবধরণের আত্মত্যাগের জন্য তিনি সব সময় প্রস্তুত ছিলেন। কাজেই, তারই আদর্শেও সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে জনগণের জন্য কতটুকু আমরা করতে পারলাম, জনগণকে কি দিতে পারলাম, কিসে জনগণের কল্যাণ হবে-সেই চিন্তা করতে হবে।’

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব