খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনভিপ্রেত: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২২শে আগস্ট ২০২০ ০৬:১৭ অপরাহ্ন
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনভিপ্রেত: ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে শুক্রবার (২১ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে অসত্য ও অনভিপ্রেত দাবি করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শনিবার (২২ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মহাসচিব এ প্রতিবাদ জানান।মির্জা ফখরুল বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আমাকে মারার চেষ্টা করেছেন’। এছাড়া তিনি খালেদা জিয়াকে নিয়ে আরও মনগড়া ও ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন-যা অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

মূলত ২১ আগস্টের আকস্মিক হামলার ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হতবাক ও বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান। খালেদা জিয়া তখন শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানাতে চেষ্টা করেন। এজন্য নিরাপত্তা বাহিনী দিনভর চেষ্টা চালায়। কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী সুধা সদনের আশেপাশের রাস্তা দিনরাত দখল করে রেখেছিল।

একপর্যায়ে নিরাপত্তার অগ্রিম টিম হিসেবে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। ২১ আগস্ট বোমা হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং এতে হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। এ ভয়াবহ হামলার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও কেবিনেট নিন্দা জানান, নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান এবং দোষীদের বিচারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনার কাছে খালেদা জিয়া নিজ স্বাক্ষরে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে চিঠি পাঠান। সেই চিঠি পৌঁছাতে গিয়ে পত্রবাহক নিজেও হামলার শিকার হন। বোমা হামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই সদস্যরা আসেন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত দাবি অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, যোগ করেন ফখরুল।

তিনি আরো বলেন, পরে ১/১১ এর সরকারের সময় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে অভিযোগ পত্রে (চার্জশিট) বোমা হামলার সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের জড়িত থাকার কোনো উল্লেখ নেই। খালেদা জিয়ার নাম কেউ কখনোই উচ্চারণ করেননি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে রচিত সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম জড়ানো হয়। এতে সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণ হয় যে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে পুলিশি ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশে কল্পিত চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে। যে পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনি বর্তমান সরকারের অত্যন্ত আপনজন হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ গ্রেনেড হামলার জন্য তারেক রহমানকে দায়ী করে। এ দাবির সমর্থনে তারা হাজির করে মুফতি হান্নানের একটি বানোয়াট জবানবন্দি, যা ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মুফতি হান্নানকে পাশ থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা শিখিয়ে দিচ্ছেন, কি কি বলতে হবে। মুফতি হান্নানকে দিয়ে যদি বিএনপি সরকার গ্রেনেড হামলা করায়, তাহলে সেই সরকারই ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর কেন তাকে গ্রেফতার করে, প্রশ্ন করেন তিনি?

মির্জা ফখরুল বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি বিশ্লেষণ করলে এটিই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপিকে ধ্বংস করার একটি সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই ২১ আগস্ট সংক্রান্ত মামলায় বিএনপিকে জড়ানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য এখনও চলমান রয়েছে। আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জড়াতে সম্পূরক চার্জশিট করার মাধ্যমে প্রহসনের বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাজা দিয়ে এখন খালেদা জিয়াকে টার্গেট করা হয়েছে। ২১ আগস্ট নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ মামলায় কোনোভাবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কেউ কখনোই টু শব্দটি করেননি। এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে করা শনিবারের (২১ আগস্ট) অপরিণামদর্শী, দায়িত্বহীন, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্যের আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।