ইসলামে ধৈর্য ও সহনশীলতার পুরস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১৫ই মে ২০২২ ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
ইসলামে ধৈর্য ও সহনশীলতার পুরস্কার

ইসলাম রহমত তথা দয়ার ধর্ম। এ রহমত বা দয়া শুধুমাত্র মুসলমানের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের চলার পথকে সহজ করে দেয় না বরং অন্য সবাইকেও সঠিক, সুন্দর ও শান্তির পথ দেখায়। কেননা ইসলামের সুমহান শিক্ষাই হলো- ‘প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ক্ষমা করা এবং মানুষের প্রতি সহনশীল হওয়া, যখন সে ভুল করে।’


একজন মুসলমান বাস্তবেও এ কথা বিশ্বাস করে যে, একমাত্র ইসলামই মানুষকে সহনশীল হতে এবং অন্যকে ক্ষমা করতে উপদেশ দেয়। আর কুরআন সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থাও তাই।


সহনশীলতা ও ক্ষমা মুসলমানের ঈমানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। যার প্রমাণ রয়েছে স্বয়ং বিশ্বনবির সুদীর্ঘ হায়াতে জিন্দেগিতে। একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ঈমান কী? তিনি বললেন, ঈমান হচ্ছে ধৈর্য এবং সহনশীলতা। (সিলসিলা সহিহা)


এ কারণেই সহনশীলতা ইসলামের একটি মৌলিক নীতি এবং আবশ্যক পালনীয় ধর্মীয় নৈতিক কর্তব্য। সহনশীলতা ও ধৈর্য অবলম্বনের অর্থ এই নয় যে, ‘ইসলাম কোনো অন্যায়ের ব্যাপারে কারো সঙ্গে আপোষ করে, ছাড় দেয়, অনুকম্পা বা প্রশ্রয় দেয়।


আর এ কথাও বুঝায় না যে, ইসলামে নীতির অভাব রয়েছে। ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ন্যায়ের পক্ষে গুরুত্বের অভাব রয়েছে। এ কথা মনে রাখতে হবে যে, ইসলামই একমাত্র ভারসাম্যপূর্ণ ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক।


ইসলাম সব সময় সহনশীল কিন্তু অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, অন্যের অধিকার কেড়ে নেয়াসহ আল্লাহ তাআলার অধিকার লঙ্ঘনে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।


আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গা সহনশীলতা ও ধৈর্য অবলম্বনের ব্যাপারে নসিহত পেশ করেছেন। আবার সহনশীল ব্যক্তিদেরকে জান্নাতে অনেক উঁচু মর্যাদা ও নিয়ামত দানের কথা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-


‘এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না। তার বৃক্ষছায়া তাদের ওপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা হবে।

তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফটিকের মত পানপাত্রে। রূপালী স্ফটিক পাত্রে, পরিবেশনকারীরা তা পরিমাপ করে পূর্ণ করবে। তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র। এটা জান্নাতস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝরণা।


তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।’ (সুরা দাহর : আয়াত ১২-১৯)


পরিশেষে…

দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহনশীলতা ও ধৈর্যের বিকল্প নেই। আর ইসলাম ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়সহ সকল ক্ষেত্রে সহনশীলতা শিক্ষা দেয়।


যেমন-পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান-সন্তুতি এবং ভাই-বোনের মধ্যে সহনশীলতা; বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মতামত ও চিন্তার ক্ষেত্রে সহনশীলতা; এমনকি ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মানুষের আন্তধর্মীয় সম্পর্ক, সংলাপ ও সহযোগিতার মধ্যমে সহনশীলতার প্রয়োজন অত্যাধিক।


তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের রাজনৈতিক, আইনগত, সংস্কৃতিক, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে সহনশীলতার পথ অবলম্বন করা প্রত্যেক মানুষের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ন্যায়ের পথে থেকে ধৈর্য ও সহনশীল ভূমিকা পালন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনে বর্ণিত সহনশীলতা ও ধৈর্য ধারণ করার মহা পুরস্কার লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।