নবিজী (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ১০ই জুন ২০২২ ১০:১৫ পূর্বাহ্ন
নবিজী (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

সর্বকালের ও সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং নবিকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন ছিল বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। এই মহান রাসুল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিচ্ছেন-


وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا کَآفَّۃً لِّلنَّاسِ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ


‘আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ২৮)


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেবল মক্কা শহর কিংবা সেই যুগের লোকদের জন্যই পাঠাননি বরং তিনি কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীর মানুষ ও জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর মাধ্যমেই পৃথিবীতে শান্তির বাতাস প্রবাহিত হয়েছে।কতই না অতুলনীয় ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ। হাদিসে এসেছে-


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদি মসজিদে এক মরুচারী বা বেদুঈন আসে আর সেখানেই (মসজিদে) প্রস্রাব করতে বসে পড়ে। লোকজন তার দিকে ধেঁয়ে আসে বা ছুটে যায়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের বারণ করে বললেন, ’একে ছেড়ে দাও আর সে যেখানে প্রস্রাব করেছে সেখানে পানির বালতি ঢেলে দাও। তোমরা লোকদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সৃষ্টি হয়েছ, কাঠিন্যের জন্য নয়।’ (বুখারি)


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ এতটাই অতুলনীয় ছিল যে তিনি ইহুদির লাশকেও সম্মান দেখিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-


একবার এক ইহুদির লাশ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর এতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই লাশের সম্মানার্থে ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন যতক্ষণ না লাশটি তার সামনে থেকে চলে যায়। পাশ থেকে হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি তো ইহুদির লাশ। এতে আল্লাহর রাসুল উত্তর দিয়েছিলন, সে কি মানুষ ছিল না? (বুখারি)


তিনি ছিলেন মানবতার নবি। বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। যে রহমতের নবি একজন ইহুদির লাশকে সম্মান জানানোর জন্য তার সাথিদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সেই নবিকে নিয়ে কটুক্তি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারে না। হাদিসের বর্ণনা থেকে আরো জানা যায়- হজরত আবু বাকারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)


তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফির হয়। তার (মাজলুমের) মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই (অর্থাৎ তার বদদোয়া দ্রুত কবুল হয়ে যায়)’ (মুসনাদে আহমদ)


প্রতিবেশির অধিকারের বিষয়েও বিশেষ তাকিদ দিয়েছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশির সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা অনেক বড় একটি নৈতিক গুণ। হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম সর্বদা আমাকে প্রতিবেশির সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার তাগিদ দিয়েছেন, এমনকি আমার ধারণা হয়, সে তাকে আবার উত্তরাধিকারীই না বানিয়ে দেয়। প্রতিবেশির সঙ্গে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব এত বেশি।


এরপর রয়েছে শাসকের আনুগত্য। এ সম্পর্কে তিনি সবসময় তাগিদ দিয়েছেন আর বলেছেন, শাসকের আনুগত্য করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য আর উন্নত নৈতিকতার এটিই দাবি আর সুনাগরিক হওয়ার দাবি হলো-’নিজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আনুগত্য করা। যদি কোন কৃষ্ণাঙ্গ কৃতদাসও তোমাদের আমির নিযুক্ত হয় তাহলে তার আনুগত্য করো, এরপর যে দেশে বসবাস করছ, সেখানকার নাগরিক, সেদেশকে ভালোবাসা সম্পর্কে বলেছেন, ‘দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ’।


এজন্য এই  নৈতিক চরিত্রের দাবি হলো, নিজ কর্মকর্তাদের আনুগত্য করা আর নিজ দেশকে ভালোবাসা। সেখানে স্মরণ রেখ! এ বিষয়গুলো ঈমানের অঙ্গও বটে। এজন্য একজন মুসলমান, যে দেশেই সে বসবাস করুক না কেন; সে দেশীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রেখে বসবাস করা উচিৎ।


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে যখনই কোনো জাতির কোনো সম্মানিত ব্যক্তি আসবে তাকে সম্মান করো।’ (জামিউল মাসানিদ ওয়াল সুনান)


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে একথা প্রসিদ্ধ ছিল যে, তিনি কোন জাতির দূতকে-ই কোনরূপ কষ্ট দিতেন না। (বুখারি) বরং তিনি তার শেষ দিনগুলোতে অসিয়ত হিসেবে এই তাগিদ দিয়েছিলেন, ’তোমাদের কাছে যখনই কোনো জাতির কোন প্রতিনিধি আসেন তখন তাকে উপহার-উপঢৌকন ইত্যাদি দিও, যেভাবে আমি দিয়ে থাকি। (বুখারি)


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীর সংশোধনের জন্য কাজ করেছেন। যেখানে না কোন স্কুল ছিল আর না ছিল মাদ্রাসা। তিনি বাড়িতে উঠা-বসা, শয়ন-জাগরণ, কথাবার্তা বলায় এবং জ্ঞানার্জনের শিষ্ঠাচার থেকে আরম্ভ করে দেশীয় এবং জাতীয় আর পৃথিবীতে রাজত্বকরার সকল নিয়ম-নীতি অত্যন্ত স্নেহ ও ভালোবাসার সঙ্গে শিখিয়েছেন।


মক্কা-মদিনার ছোট-ছোট বাহ্যত দরিদ্র ও অনুন্নত জনবসতিতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  হাতে শিক্ষা প্রাপ্তরা নিজেদের যুগে ইরান, রোম, মিশর, সিরিয়া আর দজলা ও ফুরাত নদীর তীরে বসবাসকারীদের অজ্ঞতা ও নিস্পেষণমূলক সমাজ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে জ্ঞান ও তত্ত্বের এমন ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করেছেন যা পরবর্তীতে শত শত বছর ধরে গোটা মানবজাতীকে সরল-সুদৃঢ় পথ প্রদর্শনের কাজ করেছে।


তাঁর শিষ্যরা (সাহাবিরা) প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের জ্ঞান, সাহিত্য এবং ধর্মীয় জগতের চিত্রই পাল্টে দিয়েছেন। বরং যদি একথা বলা হয় তাহলে তা ষোলআনা সত্য ও যথার্থ হবে যে, আজও বিশ্বে মানবীয় সম্পর্কের পবিত্রতাকে বহাল করার আর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মাঝে ভালোবাসা ও প্রেম-প্রীতির সম্পর্ক গড়ার জন্য নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা এবং তার আদর্শ ছাড়া আর কোনো মাধ্যম নেই।


অশান্ত বিশ্বকে শান্তির ছায়াতলে আনতে হলে চাই বিশ্বনবির আদর্শ অনুসরণ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণের ফলেই আমরা পেতে পারি মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। কেননা এর মাঝেই রয়েছে সর্বপ্রকার কল্যাণ।