কালীগঞ্জে উৎপাদিত খেজুর গুড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: শুক্রবার ২১শে জানুয়ারী ২০২২ ০৪:৪৬ অপরাহ্ন
কালীগঞ্জে উৎপাদিত খেজুর গুড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে

প্রবাদে আছে “যশোরের যশ, খেজুরের রস” খেজুর গাছ বেশি থাকায় প্রতিবছর শীত মৌসুমে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পাওয়া যায় প্রসিদ্ধ খেজুরের গুড় ও পাটালি। প্রতি সোম ও শুক্রবার কালীগঞ্জে গুড় ও পাটালির বড় হাট বসে। রসের তাজা ঘ্রাণে উৎপাদিত গুড় ও পাটালি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।


 সকাল হতে না হতেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা তাদের খেজুর গুড় ও পাটালি বিক্রির জন্য কালীগঞ্জ শহরের গুড়ের হাটে আনেন। বাইরের মোকামীদের কাছে এই গুড়ের হাট ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই হাট থেকে গুড় ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ঝালকাঠি সহ বিভিন্ন জেলাতে রপ্তানি হয়ে থাকে।


কালীগঞ্জের গুড়ের হাটে মোকাম করতে আসা কুষ্টিয়ার হরিগোবিন্দপুর গ্রামের নিয়ামত আলী জানান, তিনি ৪৭ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন। প্রতিবছর মৌসুম শুরু হলে তিনি কালীগঞ্জে গুড় কিনতে আসেন। চলতি শীত মৌসুমে বৃষ্টির কারণে গাছিরা ঠিকমত গাছ কেটে সঠিক সময়ে গুড় উৎপাদন করতে পারেননি। তাই গুড় ও পাটালি হাটে কম এসেছে। চলতি হাটে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ২৮ ঠিলে (মাটির মাত্র) অর্থাৎ ৭ মণ গুড় কিনেছেন। এসব গুড় তিনি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি প্রতি কুষ্টিয়া বাজারে পাইকারী ও খুচরা দরে বিক্রি করবেন। 


বারোবাজার থেকে মোকাম করতে আসা লুৎফর রহমান জানান, তিনি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে ১৬ মণ ঝোল গুড় কিনেছেন। এসব গুড় ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করবেন। তিনি আরো বলেন, দানা গুড়ের দাম বেশি আর ঝোল গুড়ের দাম কম। এক ঠিলে দানা গুড় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর ঝোল গুড় বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। তিনি ১৮ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন বলে উল্লেখ করেন। কালীগঞ্জের শ্রীরামপুর গ্রামের আলিনুর রহমান জানান, তিনি বরিশাল, যশোর, খুলনা, পাইকগাছা, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মহাজনদের গুড় কিনে ট্রাকে করে সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠিয়ে দেন। বাজারের দর অনুযায়ী মহাজনরা তাকে টাকা পাঠিয়ে দেন। এজন্য অনেক দুরের মহাজনকে কালীগঞ্জের বাজারে আসতে হয় না। 


অপরদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রাম থেকে পাটালি বিক্রি করতে আসা খলিল বিশ্বাস জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাটালি বিক্রি করছেন। তিনি সরাসরি গৃহস্থদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে পাটালি কিনে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। দাম ভাল পাওয়া গেলে কখনো কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ হয়। 


কালীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা তোবারক আলী ম-ল জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে হাটে আসা মোকামীদের  তিনি গুড় কিনে দেন। বড় বড় মোকামীরা ঠিলে (মাটির হাড়ি) থেকে গুড় ঢেলে প্লাস্টিক ড্রামে ভরে নিয়ে যান। 


কালীগঞ্জ গুড় হাটার ইজারাদার আতিয়ার রহমান জানান, কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় প্রসিদ্ধ। এ গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের এলাকার গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া শীত মৌসুমে জ্বালানো রস ও গুড় দিয়ে অনেক পিঠা-পায়েশ তৈরি করা হয়। শীতে ক্রয় করা গুড় ব্যবসায়ীরা সারা বছর বিক্রি করেন। 


এদিকে এক শ্রেণির ইটভাটা মালিক খেজুর গাছ ক্রয় করে পুড়িয়ে ফেলছেন। আবার অনেক গাছি গুড় তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জ¦ালানী ও উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় রস সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই এখন আর আগের মত হাটে গুড় আসছে না। তবে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট এখনো টিকে আছে।