অরুয়াইলে তিতাসের ভাগ্য বদলায়নি' বেড়েছে দখল দূষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: শনিবার ২২শে জানুয়ারী ২০২২ ০৬:১০ অপরাহ্ন
অরুয়াইলে তিতাসের ভাগ্য বদলায়নি' বেড়েছে দখল দূষণ

সরকারি আইন আছে,স্হানীয় ভাবে বাস্তবায়ন কতো টুকু বা হচ্ছে। অরুয়াইল এলাকায় মানুষের  মুখে সরকারি চিঠি সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করতে থাকলে ও স্থানিয় প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কে শুনে কার কথা। আমরাতো কিছু পেয়ে থাকি। আপনি যে দেখছেন তাতে কিছু হবে না, যারা দেখার দেখে চলে গেছে। এটা কে বলে আতাত। 


যা হবার হয়েছে। এমন করে বলছেন ব্রীজের নিচে বসে পাশে সাদা বালু দিয়ে ভরাট করে একটি স-মিল নতুন ভাবে করা হয়েছে তার উপরে ছবি তোলার সময় আশি বছরে এক জন বৃদ্ধ বলেন,আমি জানি তুমি মিডিয়ায় কাজ করো তাই বললাম। বাবা আমার ছবি তোল না। কারণ আমরা সামান্য মানুষ এরা যদি জানে আমি কিছু কইছি আর রক্ষা পাইতাম না। এদের সাথে সরকারি লোকের বড় সম্পর্ক। এরাই প্রভাবশালী?? গতকাল অরুয়াইল গেলে এমন করে বললেন। 


নদী রক্ষায় গঠিত কমিশনের চেষ্টার পরও দেশের নদীগুলোর ভাগ্য বদলায়নি। দূষণ আর দখল দারদের কবল থেকে মুক্তির বদলে উল্টো দখল দূষণ বেড়েছে। ফলে পানিপ্রবাহ কমে ইতোমধ্যে তিতাস  নদী শুকিয়ে গেছে। ছবিটি আজকের।। আর পানি দূষিত হওয়ায় অরুয়াইলের তিতাস  নদীতে পানির প্রবাহ থাকলেও নদী মরে গিয়ে দূষিত হয়ে পড়েছে পানি। 


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশন থাকলেও নদী দখল তো কমেইনি বরং আইন লঙ্ঘন করে দখলদারদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রয়েছে। তাদের মতে, সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে নদী রক্ষা করা যাবে না। এজন্য আইন কার্যকর করতে হবে। কারণ উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় নদী দখল দূষণ না কমে উল্টো বেড়েছে। তাই আদালতের রায় বাস্তবায়ন ছাড়া নদী রক্ষা অসম্ভব। বতর্মান মানে অরুয়াইল তিতাস নদীর দুই পার সমান দখল দারদের রাজত্ব চলছে। অরুয়াইল ঘুরে জানা যায়, অরুয়াইলে নদীসহ  দখল হুয়া সরকারি জায়গা উদ্ধারে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লিখিত ভাবে পদক্ষেপ নিলেও তা কোনো কার্যকর হয়নি আজও পর্যন্ত। 


এখন সরকারি জায়গা উদ্ধার না হয়ে নতুন করে নদীর জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্টানে দোকান মার্কেট তৈরির কাজ চলছে গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়। এদিকে তথ্য সুত্রে জানান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নং ১৮,২০,০০০০ ,০১৮ ,০৬,০০১,১৫,(২৪) অং-১-১১০৭। বিষয়: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন সরাইল উপজেলা অরুয়াইল বাজার সংলগ্ন তিতাস নদী এবং সংযুক্ত খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং দুষণরোধ কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন। 


জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ কারী আবু বকর সিদ্দিকের সাথে কথা হলে তিনি হাতে একটি নদী কমিশনের চিঠি দেখিয়ে বলেন, আমি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে আবেদন করলে কমিশনের সচিব অরুয়াইল বাজারে তিতাস নদী ও খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলে। সরাইল প্রশাসনের কয়েক জন এসে দেখে গেছে আজ পযর্ন্ত কোন ব্যবস্হা নিতে কেউ আসেনি। তিনি বলেন,আইন'তো আছে কাগজে ! বাস্তবায়ন নাই মাঠে ' আছে আরো দখল?এমন করে দখল করতেছে আমরা দোকান থেকে বের হতে পারি না। 


বাবার পরে এখন ছেলেরা ব্রীজ থেকে শুরু ঘাটলা পযর্ন্ত বিল্ডিং করে দখল করছে। আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ইউনিয়ন নায়েব এসে দেখে যান। যারা দখল করছে তাদের সাথে মিলেমিশে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তা দেখলে জানতে পারবেন নদীর পার কেমন দখল হচ্ছে আর নায়েব সাহেব কি লেখেছে। আমি নিরীহ মানুষ। বাধা দেওয়ার শক্তি নাই। তারা হলো এলাকার প্রভাবশালী তিনি বলেন, আমরা আইনের আশ্রয় ছাড়া আর কিইবা করার আছে-?এখন আর কি করবো অপেক্ষায় দিন গুনছি প্রশাসনিক কি ব্যবস্হা গ্রহন করে। আমি নদী কমিশনের কাগজ জমে দিয়েছি। 


আবার বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল হক মৃদুল স্যারের নিকট লিখিত ভাবে সব কিছু উল্লেখ্য করেছি। এতো সব করার পর ও কিছু হচ্ছেনা এর পিছনে ইউপি নায়েবের হাত রয়েছে!এ বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে তেলিকান্দি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন,কে গণমাধ্যম বলতেই নায়েব উত্তরে বলে,আমি এ ব্যপারে কিছু বলতে পারবো না ! বলে ফোন কেটে দেন!


 সরাইল অরুয়াইল নদী ভরাট, অবৈধ দখল ও তৈরি স্থাপনার চিত্র বিভিন্ন মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদনে। বিস্তর লেখালেখি হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি জায়গায় দোকান মার্কেট করা অবৈধ প্রতিষ্ঠানে (লাল× চিহ্ন)দেন তৎকালীন সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফারজানা প্রিয়াঙ্কা।  অরুয়াইল বাজারের অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হলেও আজওপর্যন্ত অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কোন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি স্থানীয় প্রশাসন। বাজারে গেলে মহিলা মার্কেট, ফেরি দোকান ও অরুয়াইল বাজারে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন  করা ঘাটলা দখলদারা দহল তবিয়তে  আছে। এখন আবার দখল করছে ব্রীজ এলাকায়। যার ছবি দেওয়া আছে। 


অরুয়াইল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি আওয়ামীলীগ সভাপতি আবু তালেব মিয়া বলেন, অরুয়াইল তিতাস নদী ও বাজার দখলের বিষয়ে উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় একাধিক বার বলেছি। এসিল্যান্ড ম্যাডাম  বাজারে অবৈধ দোকানে লাল চিহ্ন দিয়ে গিয়েছিল। তার পর ও আজও পর্যন্ত এই ব্যাপারে কিছু হয়নি। আমরা বললে আরোও দোষী হয়। এখন তো ব্রিজ  থেকে শুরু হয়েছে দখলের রাজত্ব।


অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইঁয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, অরুয়াইল ব্রিজের কাছেও নদীর জায়গা দখল করে ভরাট করা হয়েছে। আর কিছু জায়গায় ভবনের পরিত্যক্ত ইট, সুরকি এসব ফেলে সেখানে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স-মিলের নামে দখলে রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইঁয়া বলেন,ভাটি এলাকার এক মাত্র সু- প্রসিদ্ধ অরুয়াইল বাজার সুষ্ঠভাবে ব্যবসা বানিজ্য করার স্বার্থে ও এলাকার মানুষের শান্তিতে বসবাস করতে তিতাস নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রেখে নদী, বাজার রক্ষা করতে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদ্ধার অভিযান "আমার নাশুধু"এলাকার মানুষের দাবি।  এ নিয়ে বারবার প্রতিবেদন সরকারি সংশ্লিষ্ট অফিসে দেওয়া হয়েছে। 


তিনি বলেন, এ সব বিষয়ে তদন্ত আসলে তেলিকান্দি তহসিল অফিসের তহসিলদার তদন্ত  প্রতিবেদনে ,দখলদারদের নাম উল্লেখ না করে তার মনগড়াভাবে প্রতিবেদন জমা দেন। এ ব্যপারেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।অরুয়াইল বাজার প্রতি দিন নদীর পার সরকারি জায়গা দখল করে দোকান হচ্ছে তার চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বিভিন্ন অজুহাতে দখল হচ্ছে অরুয়াইল বাজারের তিতাস নদী ও বাজারের সরকারি সম্পত্তি। অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো, মোশাররফ হোসেন বলেন,পরে এক সময় এগুলো প্রভাবশালীদের মালিকানায় চলে যায়। এতেই প্রমাণ মিলে দখল কোনোমতেই কমেনি বরং অব্যাহত রয়েছে। 


 লিখিত অভিযোগ ও অবৈধ দখলের কথা স্বীকার করে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন,সরকারি জায়গা দখল করতে দেওয়া হবে না। সরকারী জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


উল্লেখ্য যে, সরাইল উপজেলা আইন- শৃংখলা মাসিক সভায় অরুয়াইলের সরকারি জায়গা উদ্ধারের বিষয়ে একাধিক বার আলোচনায় উঠেছে।