দৌলতদিয়া ঘাট : ভবিষ্যৎ দুচিন্তায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
মইনুল হক মৃধা, জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৪শে জুন ২০২২ ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
দৌলতদিয়া ঘাট : ভবিষ্যৎ দুচিন্তায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু, যা খুলে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। এ নিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসের কমতি না থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে  দুচিন্তার পড়েছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের স্থানীয় হকার ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা।


দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ও সাধারণ যাত্রী নদী পারাপার হয়ে থাকে। দৌলতদিয়া ঘাটের স্থানীয় হকার ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা আশস্কা করছেন পদ্মা সেতু চালু হলে এ নৌপথে যানবহন ও যাত্রীর চাপ কমে যাবে। এর ফলে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার খাবার হোটেল, হকার, চা-পান দোকানদারসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কমে যাবে। তখন সংসার চালাতে হিমসিম খাবে তারা।


দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘাট এলাকা ঘিরে এখানে রয়েছে চা,পান,বিস্কুটের প্রায় দুই শতাধিক টং দোকান। যেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। কিন্তু তাদের এখন দুচিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে।


এছাড়াও এই ঘাট এলাকার আসে পাশে প্রায় দেড় শতাধিক খাবারের হোটেল রয়েছে এবং ঘুরে ঘুরে পেয়ারা, ডাব, আনারস, ডিম ও ঝালমুড়ি বিক্রি করেন প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি। সেতু চালুর পর এ ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন কমে যাবার সাথে বেচা-কেনাও কমে যাওয়ার আশঙ্কার পড়েছেন তারা।


ঘাট এলাকায় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরের একাংশ, সাতক্ষীরা, রাজশাহীর একাংশ, এবং মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ার, যানবাহনগুলো দৌলতদিয়া ঘাট হয়েই যাবে। এছাড়াও ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, সহ বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা দৌলতদিয়া -পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহার করে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করবে, তবে আগে যেখানে ২১ জেলার প্রবেশপথ ছিলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট সেখানে তা কমে গিয়ে ১২ থেকে ১৫ জেলায় নেমে আসবে। তবে পন্যবাহী ট্রাকের চাপ আগের মতই থাকতে পারে বলে তারা ধরনা করছেন।


লঞ্চ ঘাট এলাকার ফল বিক্রেতা মিলন ফকির  বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর যাবত ঘাটে ফল বিক্রি করি। পদ্মা সেতু চালুর পর ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন কমে যাবে। এমনিতেই বেশ কয়েকদিন ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম। বেচাকেনা এখনই কম তারপর আবার সেতু চালুর পর কি অবস্থায় হবে সেটা নিয়ে অনেক চিন্তায় পড়েছি। সংসার কিভাবে চালাবো সে চিন্তায় চোখে ঘুম আসেনা।


ঘাট এলাকার ৫নং ফেরিঘাটের চা পানের টং দোকানি মো. বাবলু খানঁ বলেন, প্রায় ২০-২১ বছর ঘাটের পন্টুনের পাশে আমি চা,পা, বিস্কুটের দোকান করি। এ দোকানটা করেই মা,বাবা,স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাই। পদ্মা সেতু চালুর পর ঘাট একদম শূন্য হয়ে যাবে। যাত্রী ও যানবাহনের সমাগম থাকবে না। তখন বেচাকেনা কমে আসবে। এ নিয়ে খুবই শঙ্কায় আছি।


ঘাটে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে হকারি করেন নিজাম উদ্দিন। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় তার বাড়ি। ঘাটকে ঘিরেই তার বেড়ে ওঠা, হকারি করা। সেতু চালু হলে বেচাকেনা কমে যাবে। খালেকের দাবি, ঘাট এলাকার হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। পেশা তো আর হঠাৎ করেই বদল করা যায় না। দীর্ঘদিনের পেশা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হবে।


ঝালমুড়ি বিক্রেতা ফরিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিনের পেশা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হবে। অন্য কাজও শিখি নাই। ব্যবসা করতে হলে টাকার দরকার। তাই হকারদের তালিকা করে সহজশর্তে ঋণ দিলে নতুন কিছু করতে পারবো বলে জানান ফরিদুল।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যাপস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান'কে ২৫ জুনের পর থেকে ঘাটে ফেরি কম চলাচল করবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপের ওপর নির্ভর করবে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ২১টি ফেরি যানবাহন পারাপারে চলাচল করছে। এছাড়াও আসন্ন কোরবানির ঈদের সকল প্রস্তুতি  আমরা নিয়েছি।