দেবীদ্বারে মাদ্রাসা নিয়ে দ্বন্দ্বে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, উপজেলা প্রতিনিধি - দেবীদ্বার, কুমিল্লা
প্রকাশিত: রবিবার ১০ই জুলাই ২০২২ ০২:৩২ অপরাহ্ন
দেবীদ্বারে মাদ্রাসা নিয়ে দ্বন্দ্বে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৪

কুমিল্লার দেবীদ্বারে মাদ্রাসার সভাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ছুরিকাঘাতে ৪ জন মারাত্মক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।ঘটনাটি ঘটে শনিবার বিকেল সোয়া ৫ টায় দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে। বিকাল সোয়া ৬ টায় ঘটনার পর আহত ৫ জনকে দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে মেহেদী হাসান শান্ত(১৬) নামে একজনকে মৃত: ঘোষণা করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অপর আহত ৪ জনের মধ্যে ২ জনকে মূমূর্ষাবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।


মেহেদী হাসান শান্ত(১৬) উপজেলার নূরপুর গ্রামের জাকির হোসেন সরকারের পুত্র সে পেশায় ট্রাক্টর চালক ছিলেন। আহতরা হলেন, নূরপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র আশরাফুল আলম (১৪), তার অবস্থা সংকটাপন্ন। সে নূরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। একই গ্রামের মোতালেব হোসেনের পুত্র রাসেল আহমেদ (২৪), মৃত মাজু মিয়ার পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম (২৫), খোরশেদ আলমের পুত্র আরমান আলম (১৫) সে কুমিল্লা ইশ্বর চন্দ্র পাঠশালায় দশম শ্রেণীতে পড়ে।


নূরপুর গ্রামের বিল্লাল, আকরাম, নাদীম জানান, ‘নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ী হাফেজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় আজ আসরের নামাজের পর একটি সভা ছিল। সভার পূর্বে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী মোঃ জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদ (২৫) এর সাথে স্থানীয় কয়েকজন কিশোর-যুবকের তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে সাজিদ দাবী করে বলেন, আমার চাচা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অথচ আমাদের পরিবারের কেউই কমিটির সভাপতি বা সদস্য হতে পারেনা।


এ সময় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির ও বায়েজিদ সাজিদকে মারতে আসলে এসময় সাজিদ কোমর থেকে একটি ছোরা বের করে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে ৩/৪জনকে আহত করে। সাজিদকে প্রতিপক্ষের লোকজন ঘেড়াও করে মারধর করতে থাকলে সাজিদকে বাঁচাতে তার ভাগিনা মেহেদী হাসান শান্তসহ তার বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসে। এসময় মেহেদী হাসান শান্তকে আল আমিন ও তার লোকজন এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে মারাত্মক রক্তাক্ত ও জখম করে। শান্তসহ অপর ৪জনকে দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর সন্ধ্যা ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করে।


ওই হত্যাকান্ড নিয়ে দুটি বিবাদমান গ্রুপের দ্বন্ধের রেস এলাকার মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নিহত শান্ত’র মা হাসপাতালের বারান্দায় সন্তানের শোকে মূহ্যমান। আর মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলছে, আমার পুতে কোন ঘটনার সাথে নাই, বাড়ির গাছ থেকে বগার ছাও নামাইয়া আনছে। আমার হাতে দিয়া বলে মা রান্না কইরা রাইখ, আইয়া খামু। তার পর সাজিদের বাড়ি গেছে। একটু পরে খবর পাই আমার পুতেরে মারছে, হাসপাতালে নিয়া গেছে। হাসপাতালে আইসা দেখি আমার পুতে আর নাই। আমার পুতেরে কেডায় মারল এর বিচার চাই।


এ ব্যাপারে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ'র চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক একেএম কামরুজ্জামান মাসুদ জানান, আমি এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শিদের সাক্ষাতে যা জানতে পেরেছি মূলত: আজ বাদ আসর নূরপুর মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাতা পরিবার ও অধ্যক্ষের মধ্যে চলমান বিবাদ নিরসনে একটি সভা আহবান করা হয়। ওই সভাস্থলের কাছে অপেক্ষমান সাজিদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে আল আমিন, সাদ্দাম, সগির, বায়েজিদ তাকে মারতে আসে। এসময় সাজিদ কোমর থেকে একটি ছোরা বের করে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে ৩/৪ জন আহত করে। অপর দিকে সাজিদকে বাচাঁতে তার ভাগিনা শান্তসহ তার বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে প্রতিপক্ষের হামলায় শান্ত মারাত্মক জখম হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার শান্তকে মৃত: ঘোষণা করে।


দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর রাত সাড়ে ১০টায় জানান, আমি ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসেছি, কেহই সত্য প্রকাশে রাজি হচ্ছেনা। দু’টি পক্ষই যার যার মতো বক্তব্য দিচ্ছে। এ কারনে সত্যটা নিরুপনে একটু সময় লাগবে। আরো ব্যাপক তদন্ত ছাড়া সঠিক মন্তব্য করতে পারবোনা। নিহতের মরদেহ থানায় নিয়ে এসেছি। পক্ষরা এখনো কেউ মামলা করতে আসেনি।