দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন হিলির কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: বুধবার ১৮ই জানুয়ারী ২০২৩ ০২:৫৪ অপরাহ্ন
দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন হিলির কৃষকরা

খাদ্য শষ্যের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুর জেলা। দিনাজপুরের সর্ব দক্ষিণে সীমান্তবর্তী হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। পৌষের শেষে মাঘের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে এখান কার  কৃষকরা।


জানাগেছে, চলতি রবি মৌসুমে  হাকিমপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে দুই চারশত চল্লিশ (২৪৪০) হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকের  শারীরিক পরিশ্রম ও নিবিড় পরিচর্যায়, বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। গত দুই বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে তিনগুণ। 


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের কোকতাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমন ধান কাটার পর অনেক পরিশ্রম করে জমি তৈরি করে সরিষা বীজ বোপন করা  হয়। বীজ লাগানোর ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় সরিষা ফলন ঘরে আসে। ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় প্রায়  ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫  মণ ফলন হয় সরিষার, যা বর্তমান বাজারে বিক্রি হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।


উপজেলার ছাতনী গ্রামের সরিষা চাষি  মাসুদ হাসান  বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি গুলো পড়ে থাকে তাই প্রতি বছর আমার জমি গুলোতে সরিষা চাষ করি।এবারও সরিষা চাষ করেছি।গাছ অনেক ভালো হয়েছে আশা করছি ফলনও অনেক ভালো হবে।তিনি আরো বলেন,জমিতে সরিষা চাষের সময় সার প্রয়োগ করলে বোরো রোপনের জন্য আলাদাভাবে তেমন সার দিতে হয় না এটা আমাদের অনেক উপকারে আসে।


উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বৈগ্রাম গ্রামের কৃষক মাহাবুব বলেন, আমন কাটার পর সরিষা চাষ করলে আমাদের অনেক উপকার হয় কারন সরিষা কাটাই-মাড়াই করে সেটা বিক্রি করে দেয় সেই টাকা দিয়ে বোরো ধান লাগায়। এটা আমাদের একটা বোনাস ফসল।এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, এটা স্বল্প খরচে একটি বোনাস ফসল যা প্রান্তিক কৃষকদের অনেক উপকারে আসে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার পেয়েছি। 


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা জানান, হাকিমপুর উপজেলায় এবার সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০২১ সালে এই উপজেলায় ৮শ ২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়। গত বছর ২০২২ সালে উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছে ১৬'শ হেক্টর জমিতে। এবারে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮'শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ২৪৪০ হেক্টর জমিতে। আমরা সরিষার  চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ২২'শ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ডিএপি,পটাশ ২০ কেজি ও ১ কেজি করে বীজ বিতরণ করেছি। মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এবারে রবি মৌসুমে উপজেলার সরিষা চাষিরা বাম্পার ফলন পাবে বলে আমরা আশাবাদী।