সিলেটের চা বাগানগুলোতে এ বছরও শুরু হয়েছে প্রুনিং পদ্ধতি, যা চা গাছের সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেট, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলার সব চা বাগানে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সিলেটের লাক্কাতুরা, এয়ারপোর্ট, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, এবং হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে প্রুনিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। প্রুনিং বা ছাঁটাই পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে চা গাছকে সুস্থ ও সতেজ রাখা হয়।
প্রতি বছর ডিসেম্বরে চা উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ার পর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ছাঁটাই পদ্ধতি শুরু হয়, যা চা গাছের পাতা উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ায়। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ অঞ্চলের চা বাগানগুলোতে এখন চলছে চা গাছের কচি পাতার উৎপাদন বাড়ানোর কাজ। প্রুনিংয়ের মাধ্যমে গাছের ক্ষতিগ্রস্ত বা শুকিয়ে যাওয়া শাখা ও পাতা ছেঁটে ফেলা হয়, যাতে গাছটি আবার সতেজ হয় এবং নতুন পাতা উৎপাদনে সক্ষম হয়।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন চা বাগানে সরেজমিনে দেখা যায় যে, চা শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রুনিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তারা গাছের পুরনো শাখাগুলি ছেঁটে নতুন শাখার বৃদ্ধি নিশ্চিত করছেন। বছরের শেষে চা গাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার পর, নতুন বছরের শুরুর দিকে এই পদ্ধতি শুরু করা হয়, যাতে চা গাছটি পুনরায় শক্তিশালী হয় এবং পাতা উৎপাদনে সক্ষম হয়।
চা বাগানগুলোতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করা হয়। এরপর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির মাধ্যমে গাছ আবার সতেজ হয়ে উঠে এবং নতুন কচি পাতা জন্মাতে শুরু করে। প্রতি বছরের মার্চ অথবা এপ্রিলে নতুন পাতা চয়নের কাজ শুরু হয়, যা চা উৎপাদনের মূল ভিত্তি।
এ বছরও সিলেটের চা বাগানগুলোতে প্রুনিংয়ের মাধ্যমে চা উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রুনিং পদ্ধতি চা গাছের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং নতুন পাতা উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ায়, যার ফলে চায়ের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রতিবছর মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সিলেটের চা বাগানগুলোতে চা উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকে। তবে, ডিসেম্বরের পর গাছের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া শুরু হয়, তাই প্রুনিংয়ের মাধ্যমে চা গাছকে পুনরুজ্জীবিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছাঁটাই পদ্ধতি চা উৎপাদনকে সুসংহত এবং নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে, যা দেশের চা শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, প্রুনিং পদ্ধতি চা বাগানগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন নিশ্চিত করে এবং চা চাষীদের জন্য আরও বেশি লাভজনক হতে সাহায্য করে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, এই পদ্ধতি চালিয়ে যাওয়ার ফলে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ অঞ্চলের চা শিল্প আরও উন্নতি করবে।
সবশেষে, সিলেটের চা বাগানে প্রুনিং পদ্ধতি চালু হওয়ায় চা চাষীরা সন্তুষ্ট। তারা আশা করছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় চা শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।