মিথ্যা মন্তব্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৪শে আগস্ট ২০২১ ০১:৫৮ অপরাহ্ন
মিথ্যা মন্তব্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর ক্ষতি

মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক সুমন: আজকাল প্রায়ই দেখা যায় আমরা একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অহেতুক তার ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করে ফেলি। কারো ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করা মিথ্যুকের নামান্তর। বর্তমানে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করা থেকে শুরু করে নিজের দল কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা অহরহ বানোয়াট তথা গুজবের মত ঘটনা ছড়ায়ে থাকি। যেটা সমাজের জন্য যতটা ক্ষতিকর তেমনি নিজের জন্যও ভয়ানক ক্ষতিকর। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে মুমিনরা, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্পদের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয়।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ৬)



আমরা প্রায়ই দেখি যে বিষয়ে যার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে সে বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলে, ব্যক্তিটি এটুকু মনে করে না যে তার এটুকু মন্তব্যের জন্য সমাজের কত বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ইরশাদ হচ্ছে –“তোমার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। অবশ্যই কান, চোখ ও হৃদয়—এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) কৈফিয়ত তলব করা হবে। [সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬ (প্রথম পর্ব)]


মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যা শুনেছে, তা-ই (যাচাই করা ছাড়া) বর্ণনা করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম শরিফের ভূমিকা : ১/১০৭; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)


একজন ব্যক্তিকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা মন্তব্য করা জঘন্য অপরাধ, এমনকি সেই কথা যাচাই বাছাই না করে বিশ্বাস করাও মিথ্যাবলার সমান্তরাল। কোন ব্যক্তি, দল কিংবা সম্প্রদায়ের প্রতি অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করার আগে বহুবার চিন্তা করা উচিত। একজনের সাথে আরেকজনের বিবাদ, দ্বন্দ্ব কলহের মত ঘটনা থাকতে পারে তাই বলে তার ব্যাপারে বাজে মন্তব্য করা হীনমন্যতার পরিচয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ কখনো যেন তোমাদের সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৮)


বরং আমদের সকলের উচিত সত্য সংবাদ প্রচার করা এমনকি কেউ যদি দোষীও হয় তার দোষকে গোপন করা, ইসলাম এমনই বলেছে।


হাদিস শরিফে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১০, মুসলিম, হাদিস : ২৫৮০)


আমাদের সকলের উচিত বাজে মন্তব্য পরিহার করা, কারো ব্যাপারে মিথ্যা তথা বানোয়াট সংবাদ অপপ্রচার না করা। আজকের সমাজের যত দ্বন্দ্ব ও কলহ তার মূলে রয়েছে মিথ্যা ,বানোয়াট, গুজব সংবাদ প্রচার করা। বর্তমানে একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তিকে সমাজের কাছে ছোট বানানোর জন্য অহরহ বাজে ও মিথ্যা মন্তব্য করে বসে, একটি গোষ্ঠী আরেকটি গোষ্ঠীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অহেতুক কথাবার্তা বলে দুর্নাম ছড়ায়, একটি দল আরেকটি দলকে সমাজের কাছে নিন্দনীয় করার জন্য বেফাঁস মন্তব্য করে থাকে। এগুলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ব্যাপক সমস্যার তৈরী করে। তাই কোন বিষয় মন্তব্য করার আগে শতবার ভাবা উচিত এটা সঠিক মন্তব্য কিনা! আর যিনি এসকল বানোয়াট মিথ্যা সংবাদ শুনে তার উচিত সে সকল সংবাদ যাচাই বাছাই করে গ্রহণ করা কিংবা প্রচার করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০) 


সুতরাং আমাদের সকলকে কথা বার্তা আচার-আচরণকে সংযত রেখে মন্তব্য করা, মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও গ্রহণে জ্ঞানের পরিচয় দেওয়া।


 ---- লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ