বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে জুন ২০২২ ০৫:৩০ অপরাহ্ন
বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা

বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। ইট, পাথর আর সুরকি দিয়ে গাঁথা এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান। প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে রূপচন্দ্র রায়ের ছেলে জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের হাত ধরে ইট, পাথর আর সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি হয় লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। পুরনো ভবনের চারদিকে নানা শিল্পকর্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দিঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমণ্ডিত জমিদার বাড়ি। 


এ বাড়িটি বরিশাল বিভাগের মধ্যে অন্যতম পুরনো জমিদার বাড়ি। পুরনো হওয়ার কারণে বাড়ির চারদিকের দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করেছে। বরিশাল শহর থেকে উত্তর দিকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরেই লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির অবস্থান। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়িটি অবহেলিত থাকলেও থেমে নেই পর্যটকদের ভিড়। অথচ সংস্কারের মাধ্যমে এ বাড়িটি হতে পারে বরিশালের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি হতে পারে পর্যটনের অন্যতম স্থান।


সূত্র মতে, জমিদার বাড়ির বেশিরভাগ স্থাপনাই আটচালা দেউল রীতিতে তৈরি। বাড়ির সামনেই রয়েছে কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন মঠ। আদিপুরুষ রূপচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় ওই জমিদার বংশ। পরবর্তীতে ১৭০০ সালের পর এখানে রূপচন্দ্রের পৌত্র রাজচন্দ্র রায়ের জমিদারি গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই বাড়িটি লাকুটিয়ার জমিদার বাড়ি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। রাজা রাজচন্দ্র রায়ের এ বাড়িটি উনিশ শতকেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। কালের গর্ভে আজ তা কেবল স্মৃতি বহন করে চলছে। জমিদার পরিবারের সদস্যদের খ্যাতি ছিল প্রজাকল্যাণ এবং বিবিধ জনহিতকর কার্যক্রম। বরিশাল শহর থেকে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জের সড়কটি নির্মাণ হয়েছিল লাকুটিয়ার জমিদারের সময়ে। লাকুটিয়ার জমিদার বাড়িতে আজ জমিদারি নেই, নেই জমিদারদের কোনো উত্তরসূরিও।


ঐতিহ্যের স্মারক এই জমিদার বাড়িটি অবহেলিত থাকলেও এখানে থেমে নেই কৌতূহলী পর্যকটদের আসা-যাওয়া। নানা বয়সের মানুষের আসা-যাওয়া থাকে সবসময়। জমিদার বাড়ির শেষ ধ্বংসাবশেষ ও স্মৃতিচিহ্ন দেখতে এখনো মানুষ আসে এখানে। শীতকালে মানুষজন এখানে পিকনিক করতে আসে।

এই এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনই এখানে লোকজন আসে কেউ ঘুরে দেখতে আবার কেউ ছবি তুলতে।


সূত্র মতে, জমিদার পরিবারের সদস্যদের খ্যাতি ছিল প্রজাকল্যাণ এবং বিবিধ জনহিতকর কার্যক্রমে। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন বরিশাল শহরে নির্মিত হয়েছিল ‘রাজচন্দ্র কলেজ।’


শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ওই কলেজ থেকেই তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পাকিস্তান আমলে ওই এলাকায় ‘পুষ্পরানী বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদাররা।


ওই বংশের শেষ উত্তরাধিকারী দেবেন রায় চৌধুরী বহুকাল পূর্বেই সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দেবেন রায় চৌধুরীর কন্যা মন্দিরা রায় চৌধুরীর বিয়ে হয় বরিশালের কাশিপুরের মুখার্জী বাড়িতে। সেখানেই তিনি এখনো বসবাস করছেন। ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য ইতিহাস সংগৃহীত হয়ে আছে বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে। কালের স্রোতে আজ সেই ঐতিহ্য বিলীনের পথে।